ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫

পরিবর্তন আসে ভালোবাসায়

মির্জা হাসান মাহমুদ
প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ০২:০৪ এএম

অ্যানিমেটেড সিনেমার জগতে ‘ডেসপিকেবল মি’ একটি জনপ্রিয় নাম। ইউনিভার্সাল পিকচার্স ও ইলিউমিনেশন এন্টারটেইনমেন্টের প্রযোজনায় ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি শিশু-কিশোরদের মধ্যে যেমন প্রিয়, তেমনি বড়দের জন্যও আনন্দদায়ক। ‘ডেসপিকেবল মি’ শুধু মজার দৃশ্য দিয়ে নয়, পাশাপাশি ভিন্নধর্মী চরিত্র ও গল্প দিয়ে দৃষ্টি কাড়ে দর্শকের। এই ছবির মূল চরিত্র গ্রু। সে নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভিলেন ভাবতে ভালোবাসে। তার পরিকল্পনা চাঁদ চুরি করা। তার রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি, আর রয়েছে অদ্ভুত সব অস্ত্র।

তার আজব আজব সব মিশনে সাহায্য করে হলুদ রঙের কিছু ছোট ছোট প্রাণী; সিনেমায় যাদের বলা হয় মিনিয়ন। দেখে তাদের সবসময় উচ্ছৃঙ্খল মনে হলেও কাজে কিন্তু তারা খুবই বিশ্বস্ত। একটি বিশেষ কথা জানাই, গ্রু’কে প্রথমে খারাপ লোক মনে হলেও, তার এই খারাপ চেহারার পেছনে লুকিয়ে আছে একাকিত্বের গল্প ও স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা। তিনটি অনাথ শিশুকে দত্তক নেওয়ার পর থেকে গ্রুর জীবনে পরিবর্তন আসতে থাকে।

শুরুতে সে নিজের সুবিধার জন্যই শিশু তিনটিকে দত্তক নেয়, তবে ধীরে ধীরে সে তাদের ভালোবাসতে শেখে। প্রথম সিনেমায় দেখা যায়, গ্রু চাঁদ চুরি করার একটি পরিকল্পনা করে। সেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয় আরেক ভিলেন। যার নাম ভেক্টর। চাঁদের কাছে পৌঁছানোর জন্য গ্রু তিনটি অনাথ বাচ্চাকে ব্যবহার করতে চায়। বাচ্চাগুলো ভেক্টরের বাড়িতে ঢুকে তাকে সাহায্য করতে পারবে বলে সে ভেবেছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সে বুঝতে পারে, এই বাচ্চাগুলো তার জীবনে নতুন এক অর্থের জন্ম দিচ্ছে। তখন গ্রুর মধ্যে পরিবর্তন আসে। সে বুঝতে শেখে- ভালোবাসা, দায়িত্ব ও সম্পর্ক অনেক বেশি মূল্যবান। শেষ পর্যন্ত সে নিজের ভিলেন ইমেজকে পেছনে রেখে বাচ্চাদের নিরাপত্তা ও সুখকে গুরুত্ব দেয়। 

ইলিউমিনেশন এন্টারটেইনমেন্ট প্রযোজিত এবং ইউনিভার্সাল পিকচার্স পরিবেশিত এই সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মজার চরিত্র, সহজ সংলাপ এবং শক্তিশালী বার্তার কারণে এটি ছোটদের পাশাপাশি বড়দের কাছেও সমাদৃত হয়। প্রথম সিনেমার ব্যাপক সফলতার পর এর আরও সিক্যুয়াল আসে। এগুলো হলো- ‘ডেসপিকেবল মি ২’ (২০১৩), ‘ডেসপিকেবল মি ৩’ (২০১৭), এবং ‘ডেসপিকেবল মি ৪’ (২০২৪)। এ ছাড়াও মিনিয়নদের নিয়েও আলাদা সিনেমা তৈরি হয়েছে, যেগুলোও দারুণ সাড়া ফেলেছে।

ডেসপিকেবল মি শুধু মজার গল্পই না কিন্তু! এই সিনেমা শেখায়, মানুষ চাইলেই বদলাতে পারে। কেউ চাইলেই দায়িত্ব নিতে পারে, যতই সে কঠিন স্বভাবের হোক না কেন। আর পরিবার কেবল রক্তের সম্পর্কেই গড়ে ওঠে না, ভালোবাসা দিয়েও পরিবার গঠন করা যায়। শিশুদের জন্য এটি যেমন আনন্দের উৎস, তেমনি জীবনের কিছু মূল্যবান পাঠ শেখার সুযোগও। এই সিনেমা দেখলে বোঝা যায়, একজন মানুষ যতই বদরাগী হোক না কেন, তার ভেতরেও দায়িত্ববোধ জাগতে পারে; সঠিক সময়ে, সঠিক মানুষের সংস্পর্শে।