বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ০১:০৬ এএম

নারীর অদৃশ্য শ্রমের মূল্য ৬ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ০১:০৬ এএম

নারীর অদৃশ্য শ্রমের মূল্য ৬ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা

গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি নানা ধরনের সেবাযতেœর কাজ করেন এ দেশের নারীরা। এ জন্য তারা কোনো মজুরি পান না। কিন্তু শ্রমের আর্থিক মূল্য কত, এর চিত্র পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক হিসাবে দেখা গেছে, এ দেশের নারীরা যদি গৃহস্থালি ও সেবাযতেœর কাজের জন্য মজুরি পেতেন, তাহলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন টাকা বা ৫ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। হিসাবটি ২০২১ সালের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করেছে বিবিএস। গতকাল মঙ্গলবার বিবিএসের হাউসহোল্ড প্রডাকশন স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট (এইচপিএসএ) প্রকাশ করেছে। এতে এ চিত্র ওঠে এসেছে। এ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিবিএস মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠান হয়।

বিবিএসের হিসাবে দেখা গেছে, নারীর বিনা মজুরির গৃহস্থালির কাজের আর্থিক মূল্য ৩ লাখ ৪০ হাজার ৪০ হাজার কোটি টাকা। আর সেবাযতেœর কাজের আর্থিক মূল্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। নারী-পুরুষ সবার বিনা মজুরির কাজের আর্থিক মূল্য বছরে ৬ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন টাকা বা ৬ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। রান্না, কাপড় ধোয়া, ঘর গোছানো, শিশু ও বৃদ্ধের যতœ নেওয়া কিংবা অসুস্থের সেবা এমন অসংখ্য কাজের ওপরই ভর করে চলে পরিবার ও সমাজ। তবু এত দিন এ কাজগুলো দেশের অর্থনীতির খাতায় লেখা থাকেনি। বিবিএসের এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে নারীর এই অদৃশ্য শ্রমের অর্থনৈতিক গুরুত্ব পাওয়ার গেল।

অনুষ্ঠানে ইউএন উইমেন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম বিশ্লেষক মিসেস নুবায়রা জেহিন একটি কেয়ার ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপট নির্ধারণ করেন। যেটি একটি টুল, যা ব্যক্তিদের প্রতিদিন অবৈতনিক গৃহস্থালি এবং যতেœর কাজে ব্যয় করা সময় পরিমাপ করতে সাহায্য করে। বিবিএসের ডেমোগ্রাফি এবং স্বাস্থ্য শাখার ডেপুটি ডিরেক্টর আসমা আখতার এইচপিএসএ প্রতিবেদনের মূল ফলাফল উপস্থাপন করেন। 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিনা বেতনে, অদেখা নয়: বাংলাদেশ নারীদের বিনা বেতনে সেবা এবং গৃহস্থালির কাজ স্বীকৃতি দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং ইউএন উইমেন বাংলাদেশ, বিশ্বব্যাপী উইমেন কাউন্ট প্রোগ্রামের সহায়তায় এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এর প্রডাকশন সেলেলাইট অ্যাকাউন্টের (এইচপিএসএ) কারিগরি সহায়তায়। বাংলাদেশে অবৈতনিক গৃহস্থালি এবং যতেœর কাজের এই অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিনা বেতনে গৃহস্থালি এবং যতেœর কাজ যেমন রান্না করা, লন্ড্রি পরিষ্কার করা, গৃহস্থালি ব্যবস্থাপনা এবং শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সেবা করা অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নারীরা বেশির ভাগ কাজই সম্পাদন করেন, যা অপরিহার্য কিন্তু প্রচলিত অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান থেকে বাদ দেওয়া হয়।

আরও জানানো হয়, বিবিএস সময় ব্যবহার জরিপ ২০২১ এবং শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২-এর ওপর ভিত্তি করে, এইচপিএসএ অনুমান করে যে ২০২১ সালে অবৈতনিক গৃহস্থালি এবং যতেœর কাজের অবদান ৬ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন টাকা, যা জিডিপির  ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ। অবৈতনিক কাজের যে অবদান এর মধ্যে  ৮৫ শতাংশ ছিল নারীদের অবদান। বিবিএস জানায়, আইন ও নীতিমালার সঙ্গে অবৈতনিক কাজকে একীভূত করার জন্য একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এ ছাড়া জাতীয় বাজেট এবং উন্নয়ন কৌশলগুলোয় ঘরের কাজের বিষয়টি  অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। উপযুক্ত যতেœর চাকরি এবং অবৈতনিক কাজের ওপর টেকসই অর্থায়ন এবং নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ নিশ্চিত করতে হবে। পুরুষ এবং ছেলেদের যতেœর দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে সামাজিক রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করা প্রয়োজন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অদৈত কাজকে অর্থনীতির মূলধারায় আনতে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যতœ খাতকে জাতীয় বাজেট ও উন্নয়ন কৌশলে অগ্রাধিকার দেওয়া, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ে নীতি প্রণয়ন, বেসরকারি খাতে পরিবারবান্ধব নীতি গ্রহণ ও যতœকেন্দ্রিক চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি। পাশাপাশি পুরুষ ও ছেলেদের যতœ ভাগাভাগিতে উৎসাহিত করা এবং নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রধান পরিসংখ্যানবিদ মাহিন্থান জোসেফ মারিয়াসিংহাম ভিডিও বার্তায় এ উদ্যোগকে বাংলাদেশের জন্য একটি ‘অগ্রণী পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নারীর অদেখা শ্রমের এ পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যার হিসাব নয়, বরং নীতি ও বাজেটে লিঙ্গ-সংবেদনশীলতা বাড়ানোর জন্য এক বড় ভিত্তি। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় নারীর অমূল্য অবদানকে দৃশ্যমান করার মাধ্যমে দেশ এক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করল।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি নারী ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুর্শিদ বলেন, নারীর শ্রম দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতির ছায়ায় ছিল। আজকের এ প্রতিবেদন সেই অমূল্য অবদানকে দৃশ্যমান করল। বিশেষ অতিথি ছিলেন, মমতাজ আহমেদ এনডিসি, সিনিয়র সচিব, নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং আলেয়া আক্তার, সচিব, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। অতিথি ছিলেন ইউএন উইমেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিংহ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!