বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৫, ০১:১৭ এএম

সাক্ষাৎকার অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক

ডলারের অজুহাতে ওষুধের দাম বাড়ানো মেনে নেওয়া যায় না

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৫, ০১:১৭ এএম

ডলারের অজুহাতে ওষুধের দাম বাড়ানো মেনে নেওয়া যায় না

প্রতিবার ওষুধের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল আমদানিতে ডলারের ঊর্ধ্বমুখী মূল্যকে দুষছেন। এর একমাত্র সমাধান হিসেবে দেশের এপিআই শিল্পপার্ককে কার্যকর করার তাগিদ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও জাতীয় ওষুধনীতি ২০১৬ প্রণয়ন উপ-কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক।

রূপালী বাংলাদেশকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমাদের ওষুধ আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে শুধু কাঁচামাল আমদানির অজুহাতে ওষুধের দাম মাসে মাসে বাড়ানো হবে, এটি মানা যায় না। যেহেতু আমাদের একটি এপিআই শিল্পপার্ক রয়েছে, সেহেতু সেখানে ওষুধের কাঁচামাল তৈরি করার জন্য কোম্পানিগুলোকে সরকার থেকে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হলে আমি মনে করি এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। এপিআই শিল্প বলতে অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) উৎপাদনকারী শিল্পকে বোঝায়। এটি মূলত ওষুধশিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে ওষুধের সক্রিয় উপাদান তৈরি করা হয়। 

তিনি বলেন, ওষুধ তৈরির কাঁচামাল এপিআইয়ের আমদানিনির্ভরতা কমাতে দেশেই কাঁচামাল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। কাঁচামাল তৈরির কারখানা গড়ে তোলার জন্য ২০১৭ সালে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ২৭টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ৪২টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে এই পর্যন্ত মাত্র ৩টি প্রতিষ্ঠান সেখানে তিনটি কারখানা করেছে। সেই তিনটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও দ্য ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড। এর বাইরে ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড একটি আরএনডি ল্যাব করেছে। সব মিলিয়ে সেখানে হয়তো ১০ থেকে ১১টি প্রতিষ্ঠানের কারখানা হতে পারে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে ধারণা নিয়ে ওষুধের কাঁচামাল শিল্প তৈরির পরিকল্পনা করেছিল, সেই চিন্তায় এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ওষুধশিল্প পার্কে জায়গা বরাদ্দের পর ব্যবসায়ীরা অনেকেই চীন ও ভারতের এপিআই কারখানা পরিদর্শন করে পরিকল্পনা ও বাস্তবতার মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক দেখতে পেয়েছেন। ওষুধশিল্প পার্কে জায়গা কম থাকায় অনেকেই সেখানে কারখানা বানানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।

আমরা জানতে পেরেছি, বাংলাদেশ ওষুধশিল্প সমিতির পরিকল্পনা হচ্ছে, পার্কে ১০ থেকে ১৫টি কোম্পানির এপিআই কারখানা স্থাপনের সুযোগ দেওয়া হবে। বাকিরা নিজেদের সুবিধামতো জায়গায় এই কারখানা স্থাপন করবে। আমি মনে করি, এপিআই শিল্প প্রতিষ্ঠায় আরও বড় পরিসরে পরিকল্পনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। চীন ও ভারতে এ শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য জমি ও যন্ত্র প্রযুক্তি সব দিয়েছে সরকার। এমনকি স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এই শিল্প থেকে যা লাভ আসে, সেখানেও সরকারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

দেশের ওষুধশিল্পের প্রসার নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করা এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন কিছুটা টালমাটাল এক্ষেত্রে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছুটা সমস্যা হবে এটা স্বাভাবিক। তবে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কিছু প্রণোদনা দিলে তারা এ শিল্পে অবশ্যই বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। যদি সত্যিকার অর্থেই সরকার এটি করতে পারে তাহলে বাংলাদেশ এই শিল্পে এগিয়ে যাবে। 

একটি এপিআই কারখানা বানাতে গেলে ৮ থেকে ৬৫ ধরনের পদক্ষেপ নিতে হয় উল্লেখ করে ড. আ ব ম ফারুক বলেন, কাঁচামাল তৈরিতে পৃথক যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। এসব যন্ত্র বসানোর জায়গা বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পপার্কে নেই। আবার এটা করতে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। সে অনুযায়ী আমাদের বাজারও আছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশে^র বিভিন্ন দেশে আমাদের ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। তাই এই খাতে সরকারের প্রণোদনা বিফলে যাবে না বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, দেশের মানুষের প্রয়োজনের ৯৮ শতাংশ ওষুধই এখন দেশে তৈরি হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ দেড়শর মতো দেশে ওষুধ রপ্তানিও করছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন সহজে ওষুধ পাওয়া যায়। ওষুধ নিয়ে সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি নেই। ওষুধের এই সাফল্যের পেছনে আছে ১৯৮২ সালের ওষুধনীতি। কিন্তু শুধু বেশি দাম দিয়ে কাঁচামাল আমদানির অজুহাতে মাসে মাসে ওষুধের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক কমিশনের কিছু সুপারিশ আমি দেখেছি। এগুলোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু নীতি ও পদক্ষেপ ওষুধশিল্পকে আবারও আশির দশকের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে গঠিত ১৮ সদস্যের টাস্কফোর্সে ওষুধশিল্পের কোনো প্রতিনিধি রাখেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটিসহ আরও তিনটি কমিটিতে শিল্পমালিকদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। যদিও অতীতে এসব কমিটিতে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি রাখা হতো।

তিনি বলেন, দেশের ওষুধশিল্প খাত আজ একটি পরিপক্ব ও আত্মনির্ভরশীল শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উৎপাদন মান এবং দ্রুততার সঙ্গে চাহিদা পূরণের দক্ষতা আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত। এখন প্রয়োজন এ খাতে বেশি করে গবেষণা, উদ্ভাবন ও স্থানীয় কাঁচামাল উৎপাদনে জন্য বিনিয়োগের  ব্যবসায়ীদের আগ্রহী করে তোলা। যদি এটি করা যায় তাহলে ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল আমদানির নামে বারবার নিজের ইচ্ছেমতো ওষুধের দাম বাড়াতে পারবে না। এতে সামগ্রিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি। 

তিনি বলেন, আমার কথা শুনে মনে হতে পারে আমি ব্যবসায়ীদের পক্ষে কথা বলছি। কিন্তু সামগ্রিক দিক দিয়ে এটি দেশের জন্যই উপকারী। বাংলাদেশে ওষুধের দাম এখনো বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় কম। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দাম বাংলাদেশে। তবে দামের সঙ্গে গুণমান ও নিরাপত্তার সমন্বয় রাখতে হয়। মূল সমস্যা হলো, কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ বা ব্র্যান্ডের দামকে সব ওষুধের প্রতিচ্ছবি মনে করা হয়।

ওষুধ প্রশাসনের নির্দেশনা না মেনে ব্যবসায়ীরা নিজেরা মূল্য বাড়াতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখেন ওষুধ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করছে কারা? একটি বাহিনীর লোকজন। এখানে কয়জন আছে ফার্মাসিস্ট? যদি ফার্মাসিস্টই না থাকে ওষুধের নিয়ন্ত্রণে, তাহলে তো দাম নির্ধারণে একটা সংকট থেকেই যাবে। তাই যার যে কাজ তাকে দিয়ে সেটি করাতে হবে। ঔষধ প্রশাসনে তো কোনো বিজ্ঞানী নেই। বেশির ভাগই সেনাবাহিনীর লোক। ওষুধ অত্যাবশ্যকীয় জরুরি পণ্য। এটির দাম বাড়া বা কমা অবশ্যই ঔষধ প্রশাসনের হাতে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে তো সে রকম লোকই নেই যে কোন ওষুধের কি দাম হবে তা নির্ধারণ করে দিতে পারে। এখানে যারা রয়েছে তারা তো আর এ খাতে অভিজ্ঞ নন। তাই এই খাতকে বিশেষ করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করতে হলে এখানে অভিজ্ঞ লোক নিয়োগ জরুরি। তবেই স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর গড়ে তোলা সম্ভব।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!