ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫

বিমানবাহিনীর সংবাদ সম্মেলন

ঢাকা থেকে বিমানঘাঁটি সরানোর পরিকল্পনা নেই

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ০১:১৮ এএম

রাজধানীর আকাশ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকাতেই জঙ্গি বিমানঘাঁটি রাখা অত্যাবশ্যক বলে জানিয়েছেন বিমানবাহিনীর এয়ার কমডোর শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ঘাঁটি সরিয়ে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই’। 

গতকাল সোমবার দুপুরে তেজগাঁওয়ের বাংলাদেশ এরোস্পেস অ্যান্ড এভিয়েশন ইউনিভার্সিটির ঢাকা ক্যাম্পাসের ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান তিনি। 

ঢাকায় জঙ্গি বিমান প্রশিক্ষণ ঘাঁটি সরানো হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাজধানীর স্ট্র্যাটিজিক এবং অপারেশনাল ন্যাসিসিটির সুবাদে এই দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা তথা রাজধানীর আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য রাজধানীতে জঙ্গি বিমানের ঘাঁটি থাকা অত্যাবশ্যক।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিমানবাহিনীর জরুরি সমন্বয়ক কেন্দ্রের এয়ার কমডোর মো. মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘এই দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারের পাশে থাকবে বিমানবাহিনী। প্রয়োজন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হবে’।

তিনি আরও বলেন, ‘এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ ও গভীরভাবে শোকাহত। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই’।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিমান পরিচালনা পরিদপ্তরের পরিচালক এয়ার কমডোর শহীদুল ইসলাম ও যুগ্ম পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মারুফুল ইসলাম এবং মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন (অব.) জাহাঙ্গীর আলম। 

এক প্রশ্নের জবাবে বিমান পরিচালনা পরিদপ্তরের পরিচালক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘যুদ্ধবিমান পরিচালনা, উড্ডয়ন এবং ল্যান্ড করার জন্য সুপরিসর রানওয়ে, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, মেইনটেনেন্স এবং লজিস্টিকস ফ্যাসিলিটিজ, ফুয়েল স্টোরেজ, রাডার ফ্যাসিলিটিজের সবই দরকার হয়। রাজধানীর আকাশ প্রতিরক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য স্ট্র্যাটিজিক এবং অপারেশনাল ন্যাসিসিটির জন্য রাজধানীতে বিমানঘাঁটি অত্যাবশ্যক। বিমানঘাঁটিগুলো যেখানেই থাকুক ফ্যাসিলিটিজগুলো থাকতে হয়। কিন্তু অপারেশনাল এবং স্ট্র্যাটিজিক ন্যাসিসিটির জন্য পৃথিবীর যেকোনো দেশের রাজধানীতে বিমানঘাঁটি অত্যাবশ্যক’।

তিনি আরও বলেন, ‘এইসব জঙ্গি বিমানের স্কোয়াড্রনগুলোর প্রয়োজীয় বছরব্যপী ট্রেনিং চলমান থাকে। ওই অপারেশনাল বিমানগুলোতেই আমরা ট্রেনিং করে থাকি’। প্রশিক্ষণ বিমানগুলোতে দুইজন পাইলট থাকেন এবং ‘সিঙ্গেল সিটার’ যুদ্ধ বিমানগুলোর ‘ক্যাপাসিটি এবং ক্যাপাবিলিটি’ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণগুলো হয়ে থাকে বলেও জানান তিনি।

দুর্ঘটনার সময় পাইলটের সঙ্গে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের যোগাযোগ ছিল কি না জানতে চাইলে এয়ার কমডোর মিজানুর রহমান জানান, এ বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার সর্বশেষ অ্যাকশন কি ছিল এবং কোনো ধরনের জটিলতা ছিল কি না বা কোনো গোলোযোগের সম্মুখীন হয়েছিল কি নাÑ এ বিষয়গুলো তদন্ত পরিষদে বিস্তারিত আসবে। আমরা তদন্ত চলাকালে কোনোরূপ আলাদা পর্যালোচনা বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকব।

প্রথমিক তদন্তে পাইলট শেষ মুহূর্তে কোনো ধরনের জটিলতায় পড়েছিলেন কি না বা তিনি কোনো সাহায্য চেয়েছিল কি নাÑ জানতে চাইলেও এসব বিষয়ে তদন্ত চলাকালে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

পাইলট ‘হাইট লুজ’ করছিলেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসছে। এ ছাড়া মাইলস্টোন ভবনের উচ্চতার বিষয়ে জানতে চাইলে এয়ার কমডোর মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আপনারা জানেন এখন অনেক কিছু অনুমাননির্ভর আসছে। বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত চলমান। প্রত্যেকটা বিষয় তদন্ত প্রক্রিয়ায় চলে আসবে’।
এদিকে জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা তদন্তে সহায়তার জন্য চীনের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে এয়ার কমডোর মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় তদন্ত কাজে সহায়তার জন্য চীনের একটি বিশেষজ্ঞ দল আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তদন্তে আন্তর্জাতিক সহায়তা দুর্ঘটনার মূল কারণ চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে’। ঘটনার দিন বাংলাদেশ বিমানবাহিনী উদ্ধারকার্যে অংশগ্রহণ করে এবং একই দিনে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। পরবর্তীতে, বিমানবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে সম্পাদনের জন্য গত ২১ জুলাই ‘জরুরি সহায়তা কেন্দ্র’ গঠন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন (অব.) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনার দিন স্কুলে ৭৩৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিল ৫৩৮ জন। নিচতলার গ্রিল নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পুরো জায়গাটি একসময় নিচু ছিল। পরে বালি ফেলে মাটি উঁচু করা হয়। এর আগেই ভবনের নিচতলায় গ্রিল বসানো হয়েছিল শিশুদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই।

তিনি আরও জানান, স্কুল পুনরায় কবে খুলবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে যত দ্রুত সম্ভব খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই দুপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান রাজধানীর দিয়াবাড়িতে অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের স্কুল ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই শিশু শিক্ষার্থী।