ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের জনপ্রিয় ও ব্যস্ত নায়ক মাসুম পারভেজ রুবেল। চলচ্চিত্রে তিনি মার্শাল আর্ট কিংবদন্তি ও অ্যাকশন কিং হিরো হিসেবে সুপরিচিত। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ২৫০টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় থেকে দূরে আছেন এই অভিনেতা। সর্বশেষ তাকে আলোচিত নির্মাতা রায়হান রাফি পরিচালিত ‘ব্ল্যাক মানি’ নামের ওয়েব সিরিজে দেখা গেছে। এই সিরিজের মাধ্যমে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নাম লেখান রুবেল।
এরপর আর অভিনয়ে দেখা যায়নি তাকে। অভিনয় না করলেও চলচ্চিত্রের বিভিন্ন কার্যক্রমে বেশ সরব অভিনেতা। দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি হিসেবে। সমিতিতে এক আড্ডায় তার স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের ব্যস্ততার কথা। তার কণ্ঠে পাওয়া যায় আক্ষেপের সুরও।
এফডিসিতে কম আসার কারণ উল্লেখ করে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে রুবেল বলেন, ‘এখন এফডিসিতে আসলে অনেক কষ্ট হয়। শুটিং তো দূরের কথা এখন সমিতির দু-চারজন লোক ছাড়া এফডিসিতে কেউ আসে না। এফডিসির এমন চিত্র দেখলে কষ্ট হয়। যে কারণে কম আসি। একসময় প্রতিটি ফ্লোরে আমার শুটিং ছিল। চলচ্চিত্রের সেই সোনালি দিন আজ আর নেই। থাকবেই কি করে। এখন তো কেউ শিল্পটা নিজের মধ্যে ধারণ করে না। সবাই শর্টকাটে বড়লোক হতে চায়। তাদের টার্গেটই থাকে রাতারাতি গাড়ি বাড়ি করার।’
নিজের পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করে এই অভিনেতা বলেন, একটানা ৩৭০ ঘণ্টা মারামারির দৃশ্য করেছি। রোজা রেখে মারামারির দৃশ্য করতাম। কখনো রোজা মিস করিনি। চলচ্চিত্রকে দিয়েছি বলেই আজও সবার ভালোবাসায় আছি। যারা দেয়নি কিন্তু শুধু নিয়েছে তারা কিন্তু হারিয়ে গেছে।’
যোগ করে রুবেল বলেন, ‘আমার ২৫০টি সিনেমার মধ্যে প্রায় ২০০ সিনেমার শুটিং হয়েছে কক্সবাজার। একসময় কক্সবাজার প্রচুর শুটিং হতো। এমনও হয়েছে কক্সবাজার একটানা সাড়ে চার মাস শুটিং করেছি। শুটিং করতে গিয়ে সেখানকার মানুষের অগণিত ভালোবাসা পেয়েছি।’
একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগে সিলেটে রোজার দিনে শুটিং বন্ধ ছিল কিন্তু আমার সিনেমা বলে শুটিং করতে দিয়েছিল। একই ঘটনা একবার কক্সবাজার ঘটেছিল। এটা আমার অর্জন। একসময় কক্সবাজারে সিনেমার মানুষে ভরা ছিল।’
শাকিব খানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শাকিবের পরে আর কেনো নায়ক জায়গা করতে পারেনি। শাকিবের কাজের প্রতি ভালোবাসা ছিল যে কারণে আজকের অবস্থানে। আগের শিল্পীদের কাজের প্রতি ডেডিকেশন ছিল। যেটা এখনকার শিল্পীদের মধ্যে নেই। চলচ্চিত্রের শেষ স্টার পপি, মৌসুমী, শাবনূর ও পূর্ণিমা। এরপর আর নতুন তারকা তৈরি হয়নি।’
আর সিনেমায় দেখা যাবে কিনা জানতে চাইলে উত্তরে এই অভিনেতা বলেন, ‘ভালো গল্প ও চরিত্র পেলে অবশ্যই কাজ করব। আমি কাজ ভালোবাসি।’
আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকাই সিনেমায় রুবেলের আগমন। ১৯৮৬ সালে শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘লড়াকু’ সিনেমায় অভিনয় করার মধ্য দিয়ে ঢাকাই সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে নায়ক হিসেবে পথচলা শুরু করেন তিনি। প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত। এরপর একই পরিচালকের সঙ্গে জুটি বেঁধে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করেন এ নায়ক।
ব্যতিক্রমী ভাবনার সব সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। নায়ক রুবেল অভিনীত তেমন কোনো সিনেমাই ফ্লপ বা ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়নি। এমনকি তার অভিনীত প্রথম টানা ১০টি মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাই ছিল সুপারহিট ও বাম্পারহিট। অভিনেতার পাশাপাশি প্রযোজক, পরিচালক, ফাইট ডিরেক্টরও রুবেল।