বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান সাইদুল

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৬:৫৮ এএম

এক পরিপূর্ণ নায়কের নাম শাকিল খান

হাসান সাইদুল

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৬:৫৮ এএম

এক পরিপূর্ণ নায়কের নাম শাকিল খান

চিত্রনায়ক শাকিল খান। নব্বই দশকের একজন সুদর্শন নায়কের নাম। নব্বই দশকটা যাদের শৈশবকাল ছিল তারা অথবা যারা চলচ্চিত্রপ্রেমী, তাদের কাছে একটি আবেগ আর আগ্রহের নাম ছিল শাকিল খান। রেডিও, সিডি-ভিসিডি কিংবা ফিতার জগৎ নিয়ে যাদের বেশ আগ্রহ ছিল তাদের আগ্রহের অন্যতম একটি কারণ চিত্রনায়ক শাকিল খানের অভিনয়, গান, সংলাপ আর মায়াবী চাহনি।

শাকিল খান অভিনীত প্রথম সিনেমা ১৯৯৭ সালে মুক্তি পেলেও শোবিজ দুনিয়ায় তার আগমন ঘটে ১৯৯৪ সালে ম্যাগাজিনের মডেল হয়ে। কেউ কেউ শাকিল খানকে একজন প্যাকেজ শিল্পীও বলে থাকতেন তখন। কিন্তু কি নেই তার মাঝে। অভিনয় তো বটে, সংলাপে মাধুর্যতা নাচের তাল গানে ঠোট মেলানোর পাশাপাশি সিনেমার স্ক্রিপ্টও লিখতেন এ নায়ক। পছন্দের গানের কোরিওগ্রাফার হতেও ভুল করেননি। তার লিপে অনেক গান এখনো দর্শক নন্দিত। যেমন- ভালোবেসে অন্তরে অন্তরে, তোমায় দেখলে মনে হয় হাজার বছর আগে বুঝি ছিল পরিচয়, প্রতিদিন তোমাকে আমি চাই কিংবা কি দারুণ দেখতে গানগুলোতেও অভিনয়ের পাশাপাশি কোরিওগ্রাফারের মতো কাজ করেছেন। অনেক সিনেমার স্ক্রিপ্ট ও পরামর্শক ছিলেন এ নায়ক। 

ইনোসেন্ট লুকের এ নায়কের অভিনয়ে প্রথমদিকে একটু শিশুসুলভ ব্যাপার থাকলেও দিনে দিনে উন্নতি করেছিল। শাকিলের নিজস্ব একটা ধাঁচ ছিল। তিনি তার মতো করেই অভিনয়টা করতেন। রোমান্টিক সিনেমার জন্য পারফেক্ট ছিল এবং সেটি ফুটিয়ে তুলতেন বেশ চমৎকারভাবে। হাসোজ্জ্বল হওয়াতে রোমান্টিক অভিনয়ে তিনি মানিয়ে নিতেন সহজেই।

শাকিল খানের সিনেমার ক্যারিয়ারের সময়টা খুব বেশি নয়। তবে তিনি স্বল্প সময়ে নিজের সুপ্ত প্রতিভাকে ব্যবহার করে তার সময়ের তারকা নায়কদের সঙ্গে পেশাদার প্রতিযোগিতা করে অবস্থান তৈরি করতে পেরেছিলেন খুব সহজে। জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন একেবারই অল্প সময়ে। একইসঙ্গে প্রশংসাতেও ভেসেছিলেন শাকিল খান। তিনি যে খুব জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত ছিলেন তার প্রমাণ হলে তার কম সময়ে আড়াল হয়ে যাওয়া। যার কারণে ঢাকাই চলচ্চিত্রে দর্শকদের আফসোসের বিষয় হলো শাকিল খানকে বেশি সময় ধরে না পাওয়া। তবে শাকিল খান এ অভিযাগ কিংবা অভিমানী বার্তা শুনতে অনেকটা নারাজ। 

তিনি বলেন, দর্শকরা আমার ভালোবাসার মানুষ। আমাকে কম সময় পেয়েছে এটা তাদের অভিমানী চাওয়া হতেই পারে। তবে আমি কখনো চলচ্চিত্র থেকে হারিয়ে যাইনি। হয়তো অভিনয়ে কম ছিলাম। অল্প সংখ্যক সিনেমায় অভিনয় করেছি কিন্তু আমি অভিনয় কিংবা নির্মাণের সঙ্গেই ছিলাম। ক্যামেরার সামনে সংলাপ দিয়ে চেহারা হয়তো কম দেখিয়েছি কিন্তু অভিনয়ের সঙ্গেই ছিলাম।

শাকিল খানের কাছে এ কথার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাম বলছি না- এমন ভালো সিনেমা নিয়ে দেশে এখনও হৈচৈ পড়ে। কিন্তু সেসময় সিনেমা নির্মাণের টাকাটাই ছিল না। আরও সহজ করে বলি সিনেমার প্রযাজক নাই আমার কাছে এসেছে। আমি না করিনি। প্রযোজনার টাকা দিয়েছি কিন্তু বলেছি, আমার নাম লিখতে হবে না। কিছু সিনেমার স্ক্রিপ্টের কাজও আমি করে দিয়েছি। বলছি না আমিই সব করেছি কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছিল স্ক্রিপ্টটা ঠিক করে দেয়া উচিৎ, করে দিয়েছি। অনেক সিনেমা আমার করার কথা কিন্তু আমার বন্ধু কয়েকজন নায়ক তারা আবদার করে যে সিনেমাটি সে করবে আমি ছেড়ে দিয়েছি। এসব নাম এখন বলে লাভ হবে না। কিন্তু আমি যে চলচ্চিত্রের সঙ্গে ছিলাম হয়তো দর্শকদের কখনো বলে বোঝাতে পারিনি। আমি হয়তো আরও অনেক সিনেমা করতে পারতাম তাতে কি হতো কিন্তু এখন যেভাবে আমাকে দর্শক ভালোবাসে মনে করে তা হয়তো তখন করত না।

শাকিল খান শুধু সিনেমায় অভিনয় করেই থেমে থাকেননি। নাটকেও অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত নাটকগুলোও দর্শকমহলে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। টিভি অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করেছেন একাধিকবার। দীর্ঘদিন বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের সেন্সর বোর্ডের সদস্যও ছিলেন শাকিল খান। অভিনয়ের পাশাপাশি এ নায়ক ব্যবসাতেও জড়িয়ে যান। একটা সময় ব্যবসাতে নিয়মিত হয়ে যান। তবে চলচ্চিত্র ছেড়ে যাননি। একাধিকবার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনও করেন। সব সময় চেষ্টা করেছেন শিল্পীদের পাশে থাকার।

তবে শাকিল খানকে নিয়ে যত বিশেষনই আসুক। তার হঠাৎ অভিনয় থেকে সরে যাওয়াটা ঢালিউডের দর্শকের কাছে এখনো আফসোসের বিষয়। ভিসিআরের দিনগুলোতে শাবনূর-শাকিল খান জুটির জনপ্রিয়তার দিনগুলো মনে পড়ে। চায়ের দোকানগুলোতে ভিড়ে টেকা যেত না ভিসিআরের দর্শকের চাপে। নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে যে নায়কদের দারুণ রোমান্টিক জুটি গড়ে ওঠে শাকিল খান তাদের অন্যতম। শাকিলের মায়াবী লুক রোমান্টিকের সঙ্গে মানানসই ছিল। নায়িকা পূর্ণিমা ও মৌসুমীর সঙ্গেও তার অসাধারণ অভিনয় ছিল। সেরা জুটি হিসেবে তো পপির সঙ্গে তার অনেক সিনেমায় মুক্তি পেয়েছে। একটা সময় চলচ্চিত্রপাড়ায় বলাবলি হতো যে, শাকিল খান পপি দম্পতি জুটি।

জীবনে বসন্ত এসেছে, ফুলে ফুলে ভরে গেছে মন, ও বান্ধবী অনামিকা, আজ তোমাকেই প্রয়োজন এমন গান শুনে কার না ভালো লাগতো। এ গানের অভিনেতা যে শাকিল খান। সঙ্গে রিয়াজ ও শাবনূরের অভিনয় তো ছিলে দারুণ। শাবনূরের অসাধারণ নাচ, এক্সপ্রেশন ছিল আর শাকিলের গিটার বাজানোর স্টাইল এখনো দর্শক মনে রেখেছে।

ঘুমিয়ে থাকো গো সজনী গানটা শুরুর আগে শাবনূর যখন অনুরোধ করে শাকিলকে গান শোনাতে শাকিল হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ে, নাড়ানোর ভঙ্গিটা অসাধারণ ছিল। ‘নারীর মন’ সিনেমার কথা। ‘লাল লাল গালে যার ছোট্ট তিল, তার সাথে সাথে হবে যে আমারই মিল’ শাকিলের লিপে ‘সবার অজান্তে’ সিনেমার এ গানটিও কি কেউ পারবে ভুলতে! ‘আমি করব তারে বউ’ শিরোনামের গানটি তখন মুখে মুখে ছিল মানুষের। শাবনূরের রূপ বর্ণনার অন্যতম সেরা গান।

আসলে এখনো অনেক দর্শক মানতে পারছেন না যে শাকিল খান অভিনয়ে নেই। আবার শাকিল খানও বলতে নারাজ যে তিনি অভিনয় ছেড়েছেন। কারণ তিনি অভিনয় চলচ্চিত্র আর পরিবার নিয়ে আছেন। শাকিল বলেন, এ চলচ্চিত্র দিয়েই মানুষ আমাকে চেনেন। আমি কিভাবে চলচ্চিত্রকে বিদায় নিতে পারি? শাকিল খান আবার দৃঢ় কণ্ঠে বলে ওঠেন, হয়তো শিগগিরই অভিনয়ে দেখবেন দর্শক। হয়তো তাদের ভালোবাসার মানুষ শাকিল খানকে নতুন লুকে সিনেমার পর্দায় দেখতে পাবেন।

শাকিল খান অভিনীত জনপ্রিয় সিনেমাগুলো হচ্ছে- আমার ঘর আমার বেহেশত, মা যখন বিচারক, এ মন তোমাকে দিলাম, পাহাড়াদার, বিয়ের ফুল, মগের মুল্লুক অন্যতম।

শাকিল খানের কাছে তার প্রাপ্তির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আসলে কিছু পেতে আসিনি। অভিনয় করে আমার সংসার চালাতে হবে সে ভাবনাও আমার কখনো ছিল না। কিন্তু সিনেমায় অভিনয় করে আমি দর্শকদের যে ভালোবাসা পেয়েছি এখনও পাচ্ছি তাই আমার কাছে বেশি। আমি দর্শকদের ভালোবাসা নিয়ে সারা জীবন বাঁচতে চাই।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!