ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫

বাঁচার জন্য একটুখানি সহানুভূতি চান শহিদুল

আল-আমিন, রায়গঞ্জ
প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ০২:৩৯ এএম

চার দশক ধরে সকাল হলেই হাতে পত্রিকা নিয়ে ছুটতেন মানুষের দরজায় দরজায়। কখনো ভোরের কুয়াশা, কখনো তীব্র রোদ, কিছুই থামাতে পারেনি তাকে। তিনি শহিদুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সারুটিয়া গ্রামের পত্রিকা বিক্রেতা।

আজ তিনি শয্যাশায়ী। কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা শহিদুলের এখন একটাই চাওয়া বাঁচতে চান, আরেকটু বাঁচতে।

দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। সেই আয়েই চলত তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ের সংসার। কিন্তু হঠাৎ করেই ছন্দপতন, চিকিৎসক জানান, শহিদুলের একটি কিডনি পুরোপুরি অকেজো হয়ে গেছে, আরেকটি প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে। অর্থের অভাবে নিয়মিত চিকিৎসা তো দূরের কথা, দিনে তিনবেলা ওষুধ খাওয়াটাও সম্ভব হচ্ছে না।

স্ত্রী মোছা. আলমিস বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘তিন লাখ টাকারও বেশি খরচ করেছি। এখন আর সামর্থ্য নেই। সপ্তাহে একবার ডায়ালাইসিস করাতে ৫-৭ হাজার টাকা লাগে। আমরা কীভাবে পারব?’

সহকর্মী হকার ছামিদুল ইসলাম বলেন, ‘উনি অসুস্থ হওয়ার পর সংসার ভেঙে পড়েছে। চিকিৎসার খরচ জোগাতে যা কিছু ছিল সবই বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন দেনাতে ডুবে গেছেন।’

নিজেই বলতে গিয়ে কান্নায় গলা ভারী হয়ে আসে শহিদুল ইসলামের। ‘বাড়িতে বসে শুধু ভাবি, চিকিৎসা না হলে আমি মরে যাব। আমার ছেলে-মেয়ের কী হবে? আমি কি আর কখনো পত্রিকা নিয়ে বের হতে পারব না?’

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ডায়ালাইসিস ছাড়া কোনো উপায় নেই। কিন্তু সেই ব্যয়বহুল চিকিৎসার টাকা জোগাড় করা তার পক্ষে অসম্ভব। সরকারি সহায়তা বা সমাজের হৃদয়বান মানুষের সাহায্য ছাড়া তার সামনে কোনো পথ নেই।

এমন পরিস্থিতিতে সমাজের বিত্তবান, মানবিক ও দানশীল ব্যক্তিদের প্রতি তার আকুল আবেদন, ‘আমার জন্য একটু সাহায্য করুন, আমি আবারও নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।’

এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হাসান শেখ বলেন, ‘সঠিক কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করলে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। তবে চিকিৎসার জন্য যা দরকার, তার জন্য সমাজের সামর্থ্যবানদেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন।’