চিকিৎসাসেবায় একাধিকবার দেশসেরা পুরস্কারপ্রাপ্ত যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বর্তমানে চরম জনবল সংকটে ভুগছে। সম্প্রতি হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও কার্যক্রম এখনো কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন এবং ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৮০ থেকে ৯০ জনের মতো, যার বেশিরভাগই নারী। অথচ, ৫০ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের এক-তৃতীয়াংশেরও কম রয়েছে বর্তমানে।
হাসপাতালটিতে ৩২ জন চিকিৎসকের পদের বিপরীতে কাগজে-কলমে ১৭ জন কর্মরত থাকলেও প্রকৃতপক্ষে মাত্র ৯ জন চিকিৎসক চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। বাকিরা প্রেষণে বা অনুপস্থিত।
দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকা ৪ চিকিৎসক হলেন- ডা. মৃদুল কান্তি (১২ বছর), ডা. গোলাম রসুল (২ বছর), ডা. সামান্তা রহমান শান্তা (৩ বছর) ও ডা. সঞ্চিতা সেন। তাদের মধ্যে তিনজন বিদেশে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চিকিৎসা নিতে এসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।
শাহ পরীর দ্বীপ এলাকার অন্তঃসত্ত্বা নারী শাহিদা বলেন, ‘ডাক্তার দেখানোর জন্য দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে, আবার পরীক্ষার জন্য লাইন ধরেছি। এর আগেও এসেছিলাম, তখন ডাক্তার পাইনি।’
চাঁদাপাড়া গ্রামের ফারুক হোসেন বলেন, ‘এক ঘণ্টার বেশি সময় বসে থাকার পর ডাক্তার দেখাতে পেরেছি। ওষুধ পেতে আরও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। প্রতিবারই এখানে ভীড় থাকে।’
স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপক চাহিদা মেটাতে সম্প্রতি হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ছয়তলা ভবন। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবনের কাজ ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর শেষ হলেও এখনও সেখানে চিকিৎসাসেবা চালু হয়নি।
এদিকে, ভবনটিতে কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন, ফিটিংস চুরি হয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় রঙ উঠে যাওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চিকিৎসক ও কর্মী সংকট প্রসঙ্গে সিনিয়র নার্স ঝমুর রানী হালদার বলেন, ‘নতুন মিডওয়াইফ আসেনি, ঝাড়ুদার, সুইপার সঙ্কট আছে। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে দ্রুত জনবল বাড়ানো জরুরি।’
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহসানুল মিজান রুমী বলেন, ‘আমরা ৫০ শয্যা থেকেই ১০০ শয্যার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল ও যন্ত্রপাতি নেই। একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি।’
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাসুদ রানা জানান, ‘১০০ শয্যার কার্যক্রম শুরুর জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন হয়ে গেছে। এখন ওষুধ ও খাবার সংক্রান্ত বাজেট বরাদ্দের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কার্যক্রম শুরু হবে।’
তিনি আরও জানান, ‘সারাদেশেই জনবল সংকট রয়েছে। তবে সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্পেশাল বিসিএসের মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। আশা করছি, সংকট কিছুটা হলেও কেটে যাবে।’
প্রসঙ্গত, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টানা এক দশক উপজেলা পর্যায়ে ‘দেশসেরা হাসপাতাল’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ২০১৮ সালে জাতীয় পুরস্কার এবং সর্বশেষ ২০২০ সালে ‘হেলথ মিনিস্টার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করে হাসপাতালটি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন