গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্ণি গ্রামে এক চাঞ্চল্যকর প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। একই গ্রামের আলী আহম্মেদ বাবু বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে অন্তত ৭ পরিবারের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার মাধ্যমে প্রলোভিত দেশগুলোর মধ্যে নিউজিল্যান্ড, আলবেনিয়া, কিরগিজস্থান ও ভিয়েতনাম ছিল। কিন্তু দেওয়া ভিসা ও টিকিটগুলো পরে ভুয়া প্রমাণিত হয়।
বর্ণি গ্রামের মোবাইল ব্যবসায়ী মাহমুদ আলম ব্যবসা ও জমি বিক্রি করে বাবুর হাতে প্রায় ১০ লাখ টাকা তুলে দেন। বিদেশ যাওয়ার স্বপ্নে তিনি নিজের সব সঞ্চয় ঢেলে দিয়ে আজ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রথমে নিউজিল্যান্ডে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় পরে আলবেনিয়া, কিরগিজস্থান ও ভিয়েতনামে পাঠানোর কথা বলেন বাবু। কিন্তু প্রতিবারই ভুয়া ভিসা ও টিকিট দেখিয়ে প্রতারণা করেন।
মাহমুদ আলম বলেন, ‘বিদেশ যাওয়ার স্বপ্নে বাবুকে টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু বারবার আমাকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। শেষে ৫০ হাজার টাকার একটি চেক দিয়েছিল, ব্যাংকে গিয়ে দেখি সেটি ডিজঅনার হয়েছে। এখন পরিবারের সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে।’
মাহমুদ আলম ছাড়া আরও অন্তত ৭টি পরিবার বাবুর প্রতারণার শিকার হয়েছেন। রাজীব, অপু, রাব্বী, আনিস, মেহেদী হাসান, ইয়াসীন ও রিয়াজুলসহ অনেক যুবক বিদেশ যাওয়ার আশায় বাবুর হাতে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। কিন্তু কেউই বিদেশ যেতে পারেননি, বরং এখন তারা ঋণের বোঝায় দিশাহারা।
অন্য ভুক্তভোগী মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিদেশ পাঠানোর কথা বলে আমাকে একটি ভিসা দিয়েছিল বাবু। পরে সেটা ভুয়া প্রমাণিত হয়। টাকা ফেরত চাইলে বারবার টালবাহানা করে।’
স্থানীয়রা জানান, ‘এক যুবককে আলবেনিয়া পাঠানোর কথা বলে বাবু আসলে শ্রীলঙ্কায় আটকে রাখেন। পরে সে কৌশলে পালিয়ে দেশে ফিরে আসে। ঘটনার পর থেকেই বাবু এলাকায় নেই, পালিয়ে গেছে।’
মাহমুদ আলমের স্ত্রী চাঁদনী বেগম টুঙ্গিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীকে বিদেশ পাঠানোর নামে বাবু ১০ লাখ টাকার বেশি নিয়েছে। কয়েকবার ভিসা দিয়েছে, কিন্তু সবই ভুয়া ছিল। এখন সে মোবাইল বন্ধ করে পালিয়ে গেছে। আমরা চাই, বাবুকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে টাকা ফেরত দেওয়া হোক।’
একই গ্রামের হাফিজা বেগম জানান, ‘আমার ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য বাবুর হাতে টাকা দিয়েছিলাম। ভিসা পেয়েও সেটা ভুয়া ছিল। এখনো টাকা ফেরত পাইনি।’
অভিযুক্ত বাবুর বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মা ও বোন কোনো মন্তব্য করতে চাননি। বাবুর মোবাইল নম্বরও বন্ধ রয়েছে।
টুঙ্গিপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আকরাম হোসেন জানান, ‘অভিযোগ পেয়ে আমরা বাবুর বাড়িতে গিয়েছিলাম, তাকে পাইনি। পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। টাকা ফেরত না দিলে তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন