নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতা রাশেদুল ইসলাম (৩৫)-এর বিরুদ্ধে দিনমজুর আব্দুল হামিদ তুষারকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনা শিল্পনগরী এলাকার প্রতাপেরচর গ্রামে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভুক্তভোগী সোনারগাঁ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী আব্দুল হামিদ তুষার (২৭) ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কোনাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের প্রতাপেরচর এলাকায় হারুন মিয়ার বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকেন।
অভিযোগ ও ভুক্তভোগীর বরাতে জানা যায়, আব্দুল হামিদ তুষার গত ৯ মাস ধরে লোকবল সাপ্লাইয়ের কাজে নিয়োজিত, জামায়াতে ইসলামীর নেতা রাশেদুল ইসলামের অধীনে চুক্তিভিত্তিক কাজ করছিলেন। তবে কয়েক দিন ধরে অসুস্থ থাকায় তিনি বাসায় ছিলেন। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় পিআরসহ ঘোষিত পাঁচ দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর একটি মিছিল হয়। সেই মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য রাশেদুল সকালে তুষারের বাসায় যান। তিনি যেতে অস্বীকৃতি জানালে রাশেদুল, হাবিব ও তাদের সহযোগীরা এলোপাতাড়ি মারধর করেন। একপর্যায়ে লোহার সিলারেন্স দিয়ে মাথায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে হত্যার হুমকি দিয়ে তারা পালিয়ে যান। পরে স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফ্রেশ কোম্পানির (কেমিক্যাল) লোকবল সরবরাহের কন্ট্রাক্টর রাশেদুল ইসলামের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। তার নির্দেশ না মানলে কিংবা মিটিং-মিছিলে যোগ না দিলে শ্রমিকদের চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। তার একটি সন্ত্রাসী বাহিনীও রয়েছে। মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় জামায়াতের ওই সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য একাধিক দিনমজুরকে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে সেই মিছিলে রাশেদুলের উপস্থিতিও লক্ষ করা গেছে। এর ছবি ও ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
ভুক্তভোগী তুষার বলেন, “ঘটনার পর আমাকে এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে জামায়াত নেতা রাশেদুল। না গেলে আমার হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দিয়েছে। সে আমাকে মারধর করে বলে, ‘আমি জামায়াত নেতা, মেঘনাঘাটে তোর কোনো বাপ থাকলে নিয়ে আসিস। আমি এখানকার কন্ট্রাক্টর। আমার পেছনে অনেক লোক আছে, তুই কিছুই জানিস না। যদি এলাকা না ছাড়িস তাহলে তোরে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবো।’ আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সোমবার বিকেলে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।”
অভিযুক্ত জামায়াত নেতা রাশেদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না। বাড়ির মালিক ও আমার বড় ভাই বিষয়টি দেখছেন। তবে মারধর আমি করিনি, স্থানীয় লোকজন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সে (তুষার) গত ৫ দিন ধরে কাজে যায় না। তাই জিজ্ঞাসা করতে গিয়েছিলাম। প্রতিনিয়ত স্থানীয়দের সঙ্গে মাদক সেবন করে, কিন্তু কাজে যায় না। এ কারণে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আমার সঙ্গে থাকা এক লোক তাকে সিলারেন্স দিয়ে মাথায় আঘাত করে।’
ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে জামায়াতের প্রভাব খাটিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জামায়াতের কোনো পদে নেই, তবে জামায়াত-শিবিরকে সাপোর্ট করি। বিভিন্ন সময় মিটিং-মিছিলে লোক নিয়ে যাই।’
সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল হাসান খান জানান, ‘এ বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন