ঢাকা শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫

সীমান্তবর্তী শ্রীবরদীতে ধান চাষ বাদ দিয়ে কলা চাষ

শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৫, ১১:০৯ এএম
শেরপুরের সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী উপজেলায় কলা চাষ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

শেরপুরের সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী উপজেলায় কলা চাষে বিপ্লব ঘটেছে। কলা চাষে উৎপাদন খরচ কম, অল্প পরিশ্রম ও বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে ধান চাষ বাদ দিয়ে কলা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে স্থানীয় কৃষকেরা। কারণ কলা চাষে স্বল্প সময়ে বেশি আয় করা সম্ভব। 

স্থানীয় কলা চাষিরা বলেন, ‘একটি কলা গাছ থেকে একবার ফল সংগ্রহ করার পর সেই গাছের পাশ থেকে নতুন কুড়ি জন্মায়, যা ভবিষ্যতে কলা গাছের চারা হিসাবে ব্যবহার করা যায়। এসব কলার চারা প্রতিটি ৭ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি করে অতিরিক্ত আয় হয়।

কলা আবাদের সাথে সাথে অনান্য শাক-সবজি একই বাগানে চাষ করার সুবিধা থাকার কারণে দুই দিক থেকে লভ্যাংশ পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরা। শ্রীবরদী উপজেলার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী থাকার কারণে অল্প খরচে অধিক মুনাফা লাভ হয়, অনান্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে পোকা মাকড় ও ছত্রাক এর আক্রমন কম থাকার কারণে কৃষক আগ্রহ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায় শ্রীবরদী উপজেলার আবুয়ারপাড়া, কলাকান্দা, বিলভরট, রানীশিমূল, লঙ্গরপাড়া, গড়পাড়া, ভেলুয়া, মাদারপুর, পোড়াগর, দহেরপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় উন্নত জাতের কলা চাষ হচ্ছে, যেমন সাগর কলা এবং সবরি কলা। চারিদিকে তাকালে কলা গাছ ছাড়া অন্য কোন ফসল চোখে পড়ে না। কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা পেয়ে কৃষকরা ফলনের পরিমাণ অধিক হাড়ে বেড়ে গেছে। পাশাপাশি জৈব সার ও সঠিক সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফলের গুণগত মান ঠিক থাকছে।

শ্রীবরদী উপজেলার উৎপাদিত কলা স্থানীয় বাজার ছাড়াও ঢাকার পাইকারি বাজার এবং অন্যান্য শহরে কলা সরবরাহ করা হচ্ছে। এর ফলে কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন।

আবুয়ারপাড়া কৃষক আব্বাস আলী বলেন, এক বিঘা জমিতে কলা চাষ করে বছরে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়, আমি ১ একর জমিতে কলা চাষ করেছি। এতে ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হবে। খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা লাভ হবে। এর পাশাপাশি বাড়তি ফুলকপি সবজি চাষ করেছি। ধান চাষে খরচ বেশি, লাভ কম তাই আমরা এলাকার চাষিরা কলা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছি।

আরেক কৃষক ফজল মিয়া বলেন, আগে শ্রীবরদী এলাকার এসব জমিতে শুধু ধান চাষ করা হত, এখন বেশি লাভ হওয়ায় সবাই কলা চাষ করছেন।

শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান আকন্দ বলেন, এ পর্যন্ত উপজেলায় ৭৩০ হেক্টর  জমিতে কলা চাষ করা হয়েছে। আশাবাদী যেভাবে কলার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে অচিরেই ১০০০ হেক্টর পেরিয়ে যাবে৷ কলা চাষে অল্প পরিশ্রম ও বেশি লাভের কারণে চাষিরা কলা চাষে ঝুঁকছেন। আমাদের কৃষি বিভাগ সবসময় কৃষক দের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে এবং বাগান পরিদর্শন করে কৃষকদের সুপরামর্শ দিচ্ছেন। কৃষকদের যেকোন সমস্যা সমাধানে হলে আমরা তাৎক্ষনিক তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।