ঢাকা বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫

কড়াইল বস্তিতে আগুন

পুড়ে ছাই কয়েকশ ঘর, খোলা আকাশের নিচে রাত কাটছে হাজারো মানুষের

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৫, ১২:৪৮ এএম

ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট এবং কয়েশ স্থানীয় মানুষের চেষ্টায় প্রায় ৫ ঘণ্টা পর রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে লাগা ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে কয়েকশ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটছে হাজারো মানুষের। 

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৫টা ২২ মিনিটে আগুন লাগে এবং রাত ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনের সূত্রপাত মাজার গলিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। একের পর এক সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। 

ফায়ার সার্ভিস জানায়, রাস্তায় যানজটের কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়। পরে সরু গলি হওয়ায় দূর থেকে পাইপ টেনে পানি ছিটাতে হয়।

ঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বস্তিবাসী

রাত সাড়ে ১০টার দিকে দেখা যায়, বউবাজার এলাকার কুমিল্লা পট্টি, বরিশাল পট্টি ও ‘ক’ ব্লকে এখনও ধোঁয়া উঠছে। পুড়ে গেছে হাজারো মানুষের ঘরবাড়ি। বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছেন খামারবাড়ির মাঠে বা রাস্তার পাশে। কান্না আর হাহাকারে ভারী বস্তির বাতাস।

গুলশান চেকপোস্ট বড় নৌকার ঘাটে বসে নিজের ভস্মীভূত ঘর দেখছিলেন আনোয়ারা বেগম। পাঁচ সন্তান নিয়ে থাকতেন ভাড়া বাসায়। তিনি বলেন, ‘ফ্রিজ, খাট—কিছুই আর নেই। রাতে কোথায় যাব, কিছুই জানি না।’

রিকশাচালক আবিদ মিয়া স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে কোনোমতে বের হতে পেরেছেন। বললেন, ‘আগুন নিভলে দেখি—কিছু পাওয়া যায় কি না।’

অগ্নিনির্বাপণে বাধা: যানজট, পাইপ কাটা, পানি সংকট

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মাঝেমধ্যে পাইপ কেটে যাওয়ায় পুরো সক্ষমতা নিয়ে কাজ করা সম্ভব হয়নি। 

পানি সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, উত্তরে কিছুটা সংকট ছিল, তবে লেকের দিক থেকে পানি নিয়ে কাজ চালানো হয়েছে।

পুলিশ-সেনাবাহিনী মোতায়েন

বস্তির চারপাশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে। অতিরিক্ত লোকজনকে ভেতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না, যাতে উদ্ধারকাজে বাধা না পড়ে।

আগুনের কারণ এখনো অজানা

কীভাবে আগুন লাগল, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নয় ফায়ার সার্ভিস। তবে কয়েকজন বাসিন্দা দাবি করেছেন, নিকটস্থ একটি হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুন ছড়াতে পারে—তবে এটি নিশ্চিত হয়নি।

প্রসঙ্গত, কড়াইল বস্তির একপাশে গুলশান, অন্য পাশে বনানীর মতো অভিজাত এলাকা। প্রায় ৯০ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা বস্তিতে অন্তত ১০ হাজার ঘর রয়েছে। সেখানে মাঝেমধ্যেই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি, গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ও ২৪ মার্চ আগুনে পুড়ে যায় বেশ কিছু ঘর।