ঢাকা শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫

শরীরের যেসব অংশে সাবান ব্যবহার করলে ভয়ংকর বিপদ

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৫, ০৯:৪৯ পিএম
শরীরে এমন কিছু অংশ আছে, যেখানে সাবান ব্যবহার করা উচিৎ নয়। ছবি- সংগৃহীত

গোসল আমাদের জীবনের এক অপরিহার্য অভ্যাস। শরীর পরিষ্কার রাখা, ক্লান্তি দূর করা, ত্বককে সতেজ রাখা কিংবা ঘামের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিনই আমরা গোসল করি। আর এ সময় জীবাণু দূর করার পাশাপাশি ত্বকে সুগন্ধ ছড়াতে ব্যবহার করি সাবান। কিন্তু আমরা কি জানি, শরীরের কিছু সংবেদনশীল অংশে সাবান ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে?

ত্বক বিশেষজ্ঞরা জানান, আমাদের শরীরে এমন কিছু অংশ রয়েছে, যেখানে সাবান ব্যবহার না করাই ভালো। এসব অংশে নিয়মিত সাবান ব্যবহারে ত্বকের স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়া ও প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বিনষ্ট হয়। ফলে দেখা দিতে পারে চুলকানি, শুষ্কতা বা অন্যান্য ত্বকজনিত সমস্যা। এ ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে বড় ধরনের রোগও দেখা দিতে পারে।

তাই প্রতিদিনের গোসলের অভ্যাস যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি এসব সংবেদনশীল অঙ্গের যত্ন নেওয়ার সঠিক পদ্ধতি জানা। শরীর পরিষ্কারে সাবানের ব্যবহার যেন উপকারের বদলে ক্ষতির কারণ না হয়ে ওঠে সেদিকে নজর দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে আমরা অনেকেই জানি না, শরীরের কোন কোন অংশে সাবান ব্যবহার করা যাবে না।

জেনে নিন শরীরের যেসব অংশে সাবান ব্যবহার করবেন না

চোখের চারপাশ: চোখের আশপাশের ত্বক অন্যান্য অংশের তুলনায় অনেক বেশি নরম ও সংবেদনশীল। এই জায়গায় সাবান বা অন্য কোনো কেমিক্যাল প্রবেশ করলে ত্বকে জ্বালা, লালভাব এবং অস্বস্তি তৈরি হতে পারে। কখনো কখনো চোখে সাবান চলে গেলে তা চোখের লাল হওয়া, পানি ঝরা বা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। তাই চোখের খুব কাছাকাছি সাবান ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকা উচিত এবং যদি সম্ভব হয়, এ অংশে সাবান প্রয়োগ এড়িয়ে চলাই ভালো। এ ছাড়া ঠোঁটেও সাবান ব্যবহার করা যাবে না।

মুখের অংশ: মুখের ত্বক শরীরের অন্যান্য অংশের ত্বকের চেয়ে অনেক বেশি সংবেদনশীল। সাধারণ সাবান মুখের ত্বকের প্রাকৃতিক তেল (সেবাম) কেড়ে নেয়, যার ফলে ত্বক শুষ্ক, টানটান এবং জ্বালাপোড়া করতে পারে। এটি ব্রণের সমস্যাও বাড়িয়ে দিতে পারে। মুখের জন্য বিশেষভাবে তৈরি হালকা ফেসওয়াশ ব্যবহার করা উচিত।

চুল: মাথার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য সাবানের জন্য উপযুক্ত নয়। সাবান চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা কেড়ে নেয়, চুলকে রুক্ষ ও শুষ্ক করে তোলে এবং মাথার ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই চুলের জন্য সাবান ব্যবহার না করাই সবচেয় ভালো।

যৌনাঙ্গ: যৌনাঙ্গের ত্বক সাধারণ ত্বকের তুলনায় অনেক বেশি পাতলা ও সংবেদনশীল। এই অংশের নিজস্ব পরিষ্কার করার একটি ব্যবস্থা রয়েছে এবং এর একটি প্রাকৃতিক পিএইচ ভারসাম্য থাকে। সাবান, বিশেষ করে সুগন্ধিযুক্ত সাবান, এই পিএইচ ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে। এ ছাড়া ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, যা জ্বালা, চুলকানিসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। বেশিরভাগ সাধারণ সাবানে বিভিন্ন কেমিক্যাল থাকে, যা দীর্ঘ সময়ে ব্যবহারের কারণে ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে।

কানের ভেতরের অংশ: কানের ভেতরের ত্বক খুব সূক্ষ্ম ও নরম এবং এখানে শরীরের প্রাকৃতিক ময়শ্চার তথা তেল থাকে, যা কানের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে। সাবান ব্যবহার করলে এই প্রাকৃতিক তেল ধুয়ে ফেলা হয় এবং এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তা ছাড়া সাবান কানে ঢুকে গেলে ব্যথা বা সমস্যা তৈরি হতে পারে।

নাকের ভেতর: নাকের অভ্যন্তর ত্বক ও ঝিল্লির খুব সূক্ষ্ম অংশ। নাকের ভেতরে সাবান বা কোনো কেমিক্যাল গেলে সেখানে জ্বালা, অস্বস্তি এবং সংক্রমণ হতে পারে। এ ছাড়া নাকের ভেতরের প্রাকৃতিক স্লিমে জীবাণুনাশক কাজ করে, যা শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। তাই সাবান ব্যবহার এড়ানো উচিত।

শুষ্ক বা ফাটা ত্বক: শরীরের যেসব অংশে ত্বক শুষ্ক, ফাটা বা সংক্রমিত থাকে সেখানে সাবান ব্যবহার করলে ত্বক আরও শুষ্ক ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সাবান ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ও ময়শ্চার দূর করে ফেলে, যা শুষ্ক ত্বকের অবস্থাকে আরও খারাপ করে তোলে। এই অবস্থায় বিশেষ ময়শ্চারাইজার বা ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

করণীয়: সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, শরীরের এই সংবেদনশীল অংশগুলোতে শুধুমাত্র উষ্ণ পানি ব্যবহার করা অথবা যদি বিশেষ প্রয়োজন হয়, তবে ওই অংশের জন্য নির্দিষ্ট ও হালকা পণ্য ব্যবহার করা।