ঢাকা সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫

ইনস্টাগ্রামের নতুন ফিচার নিয়ে শঙ্কায় ব্যবহারকারীরা

বিবিসি
প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০৫:১৭ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

ইনস্টাগ্রামের নতুন লোকেশন-শেয়ারিং ফিচার চালু হলেও ব্যবহারকারীদের আগ্রহ এখনো সীমিত। প্রায় ১৭ কোটি মানুষ এ সুযোগ পেলেও অ্যাপটির মানচিত্র (ইনস্টাগ্রাম ম্যাপ) এখনো প্রায় খালি। অনেকের মতে, মেটা ও ব্যবহারকারীদের মধ্যে এ নিয়ে এক ধরনের অঘোষিত দ্বন্দ্ব চলছে।

‘ইনস্টাগ্রাম ম্যাপ’ নামের এই ফিচারটির লক্ষ্য ব্যবহারকারীদের মধ্যে সংযোগ বাড়ানো হলেও, অনেকেই এটিকে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার জন্য একটি নতুন হুমকি হিসেবে দেখছেন।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ব্যবহারকারীদের সামনে পপ-আপ বার্তার মাধ্যমে ফিচারটি চালু করা হয়। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা চাইলে তাদের রিয়েল-টাইম লোকেশন একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। তবে অ্যাপটির পূর্বের গোপনীয়তা-সংক্রান্ত বিতর্কের কারণে অনেকেই এ ফিচার ব্যবহারে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন।

ব্যবহারকারীরা জানাচ্ছেন, ইনস্টাগ্রাম ম্যাপ খুঁজে পাওয়া সহজ নয় এবং লোকেশন শেয়ার করার বিষয়টি কিছুটা বিভ্রান্তিকর। মেটার দাবি, এ ফিচার ডিফল্টভাবে বন্ধ থাকে এবং কেবল ব্যবহারকারীর অনুমতির ভিত্তিতেই চালু হয়। কিন্তু অনেকেই ভুলবশত তাদের সঠিক অবস্থান প্রকাশ করছেন, যা উদ্বেগ তৈরি করছে।

ইনস্টাগ্রামের প্রধান অ্যাডাম মোসেরি থ্রেডসে একাধিক অভিযোগের জবাবে বলেছেন, কারও লোকেশন অনুমতি ছাড়া শেয়ার করা হয় না। তবু অনেক ব্যবহারকারী মনে করছেন, অ্যাপটি যথেষ্ট নিরাপদ নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, লোকেশন ডেটা হলো সবচেয়ে সংবেদনশীল তথ্যগুলোর একটি, এটি ব্যক্তির বাসস্থান, কর্মস্থল, রাজনৈতিক বিশ্বাস কিংবা ব্যক্তিগত সম্পর্কও প্রকাশ করতে পারে।

তবে ব্যবহারকারীদের অনীহা স্পষ্ট। অনেকেই জানিয়েছেন, ফিচারটি চালু করার পরেও তাদের ম্যাপ প্রায় ফাঁকা, কারণ তাদের পরিচিতদের মধ্যে খুব কমজনই এটি ব্যবহার করছেন। ২৬ বছর বয়সী ব্যবহারকারী হান্না ল-এর মতে, ‘ইনস্টাগ্রাম এমন কোনো ঘনিষ্ঠ অ্যাপ নয় যেখানে আপনি চাইবেন সবাই আপনার অবস্থান জানুক।’

তিনি বলেন, স্ন্যাপচ্যাটের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যক্তিগত যোগাযোগের জন্য বেশি উপযোগী, কিন্তু ইনস্টাগ্রাম মূলত জীবনযাত্রার একটি ‘ব্রডকাস্ট সার্ভিস’।

কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ লরি ক্র্যানর বলেন, ‘ইনস্টাগ্রাম মূলত প্রকাশ্য সম্প্রচারের জন্য তৈরি। তাই এখানে ব্যবহারকারীরা একে অপরের অবস্থান জানুক, সেটি অনেকের কাছে অস্বস্তিকর।’

শিশু অধিকার সংগঠন কমন সেন্স মিডিয়ার এক জরিপে দেখা গেছে, কিশোরী মেয়েদের ৪৫ শতাংশ লোকেশন-শেয়ারিংকে ‘বেশিরভাগ নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছে। তাদের মতে, এটি সামাজিক চাপ, মিস করার ভয় (FOMO) এবং মানসিক অস্বস্তি তৈরি করে।

গোপনীয়তা বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, ব্যবহারকারীদের উচিত লোকেশন শেয়ারিং এড়িয়ে চলা, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে। কারণ এর অপব্যবহার থেকে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

মেটা অবশ্য দাবি করছে, নতুন ফিচারটি কেবল ‘সংযোগের হালকা উপায়’ হিসেবে আনা হয়েছে। তবে ধীরগতির সূচনাই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ব্যবহারকারীরা এ পরীক্ষামূলক ফিচার নিয়ে এখনো দ্বিধায় রয়েছেন।