মুন্সীগঞ্জে চলছে প্রকাশ্য ড্রেজার তাণ্ডব। উর্বর কৃষিজমি, খাল, ডোবা-নালা ও পুকুর ভরাটের মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে অবৈধ বালু ব্যবসা। দিনের পর দিন বালু ফেলা হচ্ছে মূল সড়ক কেটে বসানো পাইপের মাধ্যমে। কিন্তু জেলা কিংবা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কার্যকর কোনো ব্যবস্থা- যা নিয়ে জনমনে উঠেছে গুরুতর প্রশ্ন: এ নীরবতা কি প্রশাসনিক ব্যর্থতা, নাকি যোগসাজশের প্রতিফলন?
২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়ন, মিরকাদিম পৌরসভা, ছোট কাটাখালী, মুন্সিরহাট, টরকির ব্রিজ, ফুলতলা খাল, চরকেওয়া, হোগলাকান্দি, চিতলিয়া, শিলই এবং মেঘনা নদীর তীরবর্তী একাধিক এলাকায় চলছে বালু ভরাটের ভয়াবহ অভিযান। প্রতিটি ড্রেজার প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৯০ হাজার ঘনফুট বালু ফেলছে- ধ্বংস করে দিচ্ছে একের পর এক ফসলি জমি ও জলাশয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে ২০টিরও বেশি ড্রেজার। মূল সড়ক কেটে বসানো হচ্ছে পাইপ, যা দিয়ে বালু ফেলা হচ্ছে জমি ও খালে। ফুলতলা খাল থেকে টরকির খাল, চরকেওয়া ভূমি অফিসের পাশের জমি, ছোট কাটাখালী থেকে লোহার পুল খাল পর্যন্ত বিস্তৃত এই অপতৎপরতা। এমনকি স্কুল ও মাদ্রাসার পাশেও বালু ভরাট চলছে নির্বিঘ্নে।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, ফসলি জমিতে বালু ফেলায় জমির পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বর্ষায় জলাবদ্ধতা, শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট- সব মিলিয়ে চাষাবাদ হচ্ছে প্রায় অসম্ভব। একই সঙ্গে উচ্চ শব্দে ড্রেজারের চলাচলে বিরক্ত ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা। পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট, রাতের ঘুম হারাম।
শিলই ইউনিয়নে মেঘনার পাড়ে বালু রাখার কারণে নদীভাঙনের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
এতবড় তাণ্ডব চললেও প্রশাসনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। একাধিক অভিযোগ জমা পড়লেও অভিযান নামের কিছু লোকদেখানো ব্যবস্থা ছাড়া বাস্তব কোনো প্রতিকার মেলেনি। বরং অভিযোগ রয়েছে, ড্রেজার মালিকদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েই এসব কার্যক্রমে ‘চোখ বুজে’ আছেন সংশ্লিষ্টরা।
এক ড্রেজার ব্যবসায়ী সরাসরি প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিগত সরকারে কোনো সুযোগ ছিল না। এখন কিছু করতে দিচ্ছে, তাই ব্যবসা করছি। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই পাইপ বসিয়েছি- এতো খরচ না হলে কি সম্ভব?’
স্থানীয়দের স্পষ্ট প্রশ্ন- প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন ভয়াবহ অনিয়ম কীভাবে দিনের পর দিন চলতে পারে? তাদের মতে, প্রশাসন সত্যিকার অর্থে দায়িত্ব পালন করলে এতবড় অপকর্ম কখনও সম্ভব ছিল না।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন