সোমবার, ০২ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মুজতবা আহমেদ মুরশেদ

প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৫, ০৫:৫৮ পিএম

বন্যা মোকাবিলায়  প্রস্তুতি এবং কূটনৈতিক তৎপরতা

মুজতবা আহমেদ মুরশেদ

প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৫, ০৫:৫৮ পিএম

রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কবি ও কথাসাহিত্যিক মুজতবা আহমেদ মুরশেদ। ছবি- সংগৃহীত

রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কবি ও কথাসাহিত্যিক মুজতবা আহমেদ মুরশেদ। ছবি- সংগৃহীত

আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামছে। চারদিকে পানিতে থইথই। ফলে বন্যা আসবে—এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের মানুষ এই চিরচেনা প্রকৃতিকে বুঝে।  তবুও প্রতিবার কোথায় জানি কী করে বন্যা মোকাবেলার প্রস্তুতরি অভাব দেখা দেয়। 

সম্প্রতি আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণেই দেশের বিভিন্ন স্থানে টানা ও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি উজানের পাহাড়ি ঢলে নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়ছে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অকাল বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানাচ্ছে, আগামী তিনদিনের মধ্যে ছয়টি জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়ছে, যার ফলে বিশেষ করে মুহুরী ও মাতামুহুরী নদীর আশপাশের এলাকায় বন্যার ঝুঁকি তীব্র হচ্ছে। একইভাবে, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের নদীগুলোর—যেমন সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী—পানি সমতলও বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে আসছে। 

এর ফলে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা প্রবল। রংপুর অঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীগুলো সতর্কসীমায় প্রবাহিত হচ্ছে, যদিও এখনও সেখানকার বন্যার ঝুঁকি সীমিত। এর পাশাপাশি পদ্মা নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে, গঙ্গার পানি স্থিতিশীল থাকলেও আগামী পাঁচদিনের মধ্যে নদীগুলোর পানি বাড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে, উপকূলীয় জেলাগুলোর নদীগুলোতেও উচ্চ জোয়ারের প্রবণতা বাড়ছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সম্পূর্ণরূপে ঠেকানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, তবে তার ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব পরিকল্পিত সচেতনতা ও প্রস্তুতির মাধ্যমে। বন্যার সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রস্তুতির এখনই সময়। বিশেষ করে যারা নদী বা উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করেন, তাদের উচিত নিরাপদ ও উঁচু স্থানে সরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি রাখা। যে কোনো মুহূর্তে ঘর ছাড়তে হতে পারে এই ধারণা থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র, জমির দলিল, শিশুদের জন্মনিবন্ধন, শুকনো খাবার, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি, মোবাইল চার্জার, টর্চলাইট ও নগদ টাকা প্রস্তুত রাখা আবশ্যক। নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সামগ্রী এবং শিশুদের খাদ্য ও ডায়াপারও রাখা জরুরি।

ঘর ছাড়ার আগে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া নিরাপদ। রান্নাবান্না বা সবজি চাষ কন্টেইনারে বা উঁচু বেডে করা উচিত যাতে ফসল পানিতে নষ্ট না হয়। কৃষকদের জন্য বীজ ও চারা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা, যন্ত্রপাতি উঁচু স্থানে সরিয়ে নেওয়া এবং কীটনাশক ভালোভাবে প্যাকেটজাত করে পানির নাগালের বাইরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। গবাদিপশুর ক্ষেত্রেও নিরাপদ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

এসব বাস্তবতা আমাদের । বন্যা প্রবণ এলাকার মানুষ এটাও জানে, বন্যার মতো দুর্যোগ মোকাবিলা কেবল সরকারি দায়িত্ব নয়—এটি একটি জাতীয় ও ব্যক্তিগত প্রস্তুতির সমন্বিত দায়িত্ব। তবে, এই পরিস্থিতির মধ্যে আরেকটি জটিল বিষয় উঠে আসে, তা হলো প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আসা পানির ঢল । গত বছর, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ার পর আকস্মিকভাবে বাংলাদেশে  বন্যার ঢল ফেনী জেলায় তীব্র আঘাত করে। সব মিলিয়ে  দক্ষিণাঞ্চলসহ ১৩টি জেলার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং ঘরবাড়ি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং জনজীবনে নেমে আসে দুর্ভোগ ও দুর্দশা । ক্ষতির এই বাস্তবতাকে উপক্ষো করা সঠিক নয়। 

প্রবল বৃষ্টির সময়ের উদ্ভুত বন্যার পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য বন্যা মোকাবেলায় মানুষকে সতর্ক করা আবশ্যক। পাশাপাশি ভারতের সাথে কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা। বাংলাদেশ একটি ভাটির দেশ—এটি এক বাস্তবতা। সেজন্য উজান থেকে আসা পানির গতিবিধি, বাঁধের জলাধারের ধারণ ক্ষমতা এবং ভারতের নিজস্ব আবহাওয়াজনিত সংকট—সবই বিবেচনায় রাখতে হয়।

 কিন্তু সেই সঙ্গে ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতির ওপর প্রভাব সম্পর্কেও ভারতের একটি সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত। যখন অতি বৃষ্টির ফলে ভারতের কোনো বাঁধের জলাধার তার সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতায় পৌঁছে যায়, তখন সময়মতো বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক করা হলে আমাদের লোকজন পূর্বপ্রস্তুতি নিতে পারে। এতে কেবল জনজীবনই রক্ষা পায় না, দুই দেশের পারস্পরিক আস্থা ও সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।

এই ধরনের তথ্য বিনিময়ের একটি কার্যকর কূটনৈতিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিতে একটি স্বচ্ছ, সময়নিষ্ঠ এবং প্রযুক্তি-নির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে উজানের পানি ব্যবস্থাপনার তথ্য অগ্রিম জানানো গেলে তা জননিরাপত্তার বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। এমন উদ্যোগ গ্রহণ কেবল দুই দেশের মধ্যকার ভারসাম্যমূলক কূটনৈতিক ভিত্তিতে বন্ধুত্ব  প্রকাশই হবে না, বরং এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় একটি দৃষ্টান্তমূলক মডেলও হয়ে উঠতে পারে।

লেখক: কবি, কথাশিল্পী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

Link copied!