শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শহিদুল ইসলাম রাজী/মেহেদী হাসান

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪, ১২:৫৩ এএম

টাকায় মেলে দ্রুত সেবা

শহিদুল ইসলাম রাজী/মেহেদী হাসান

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪, ১২:৫৩ এএম

টাকায় মেলে দ্রুত সেবা

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: রাজধানীর আজিমপুর এলাকার বাসিন্দা আলম। নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে সেই সকালে মিরপুরে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) অফিসের নির্দিষ্ট কক্ষের সামনে সিরিয়ালে দাঁড়ান তিনি। তার মতো অনেকেই নিজেদের লাইসেন্স নিতে দাঁড়িয়েছেন ওই লাইনে। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে গেলেও লোকজনের দীর্ঘ সিরিয়াল আর শেষ হচ্ছে না। ওদিকে কিছু লোক সিরিয়াল ছাড়াই লাইসেন্স বিতরণ কক্ষে (১২০ নং কক্ষ) ঢুকে দ্রুতই লাইসেন্স নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে।

এ নিয়ে বাইরে থেকে অনেক চিল্লাচিল্লি করেও কোনো সুরাহা মেলেনি। আলম অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে ওই কক্ষে ঢুকে সিরিয়াল ছাড়া লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সেখানকার কর্মকর্তা তাকে ধমক দিয়ে কক্ষ থেকে বের করে দেন। ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবারের। শুধু আলমই নন, দালাল ছাড়া মিরপুর বিআরটিএ অফিসে যেকোনো ধরনের সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষের। সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সেখানে ঘুষ বাণিজ্য, বিভিন্ন অনিয়মসহ নানান হয়রানি চলছে বছরের পর বছর ধরে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর একটু কমলেও এখন পুরোনো চেহারায় ফিরছে বিআরটিএ।

অভিযোগ রয়েছে, মিরপুর বিআরটিএ অফিসের রাজত্ব এখন দালালদের হাতে। কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে দালালদের রাজত্ব চলে এই অফিসে। দালালদের দৌরাত্ম্যে অসহায় সেবাপ্রত্যাশীরা। ফলে টাকা ছাড়া মেলে না সেবা।

জানা গেছে, বিআরটিএ কার্যালয়ে লাইসেন্সের কাজসহ বিভিন্ন সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের পড়তে হয় দালালদের খপ্পরে। এ ছাড়া ঘুষ ছাড়া মেলে না কাক্সিক্ষত সেবা। বিভিন্ন সময়ে দালালদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে অভিযান চালানো হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন মূল হোতারা। দু-একজন মাঠ পর্যায়ের দালাল ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে ফের একই কাজে লিপ্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিশেষ করে নাম্বার প্লেট, ফিটনেস, লার্নার, মালিকানা পরিবর্তন, রেজিস্ট্রেশন এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স-সংক্রান্ত কাজে ঘুষ বাণিজ্য বিআরটিএতে ওপেন সিক্রেট। বিআরটিএ অফিসের মূল ভবন থেকে শুরু করে আশপাশের চায়ের স্টল, ফটোকপির দোকান, এমনকি ফাঁকা মাঠÑ সর্বত্র দালালের ছড়াছড়ি। ফলে সেবা নিতে আসা মানুষের ভোগান্তি চরমে।

সম্প্রতি গত কয়েক দিন ধরে মিরপুর বিআরটিএ অফিস চত্বরে অবস্থান করে দালাল চক্রের অবাধ বিচরণ দেখা যায়। রূপালী বাংলাদেশের এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে দালাল চক্রের সক্রিয় সদস্যদের নাম। এই চক্রের হোতারা হলেন রাফি হাওলাদার (২০), খাইরুল ইসলাম (৩২), কবির (৩৮) উজ্জ্বল হোসেন (২৭), খোকন মোল্লা (৪০), ইমরান (২৫), শিপন (২৮), শাহজাহান আলী (৪৭), হাফিজুর রহমান (৪২), মো. মানিক (৫০), সুজন মিয়া (২০), মারুফ বিল্লাহ (২৩), অভিজিৎ মণ্ডল (২৭), ফরহাদ হোসেন রাজন (৩৬), রতন মিয়া (৪৫), সোহেল মিয়া (২৬), জাকির হোসেন (৩৮), অনিক খান (২৩), আলামিন (৩৪) ও ইসমাঈল (২৭)। এ ছাড়া হান্নান, লতিফ, নাজু, নাসির, শাহীন, সাদেকসহ আরও অনেক। এদের আন্ডারে রয়েছে আরও কয়েক শ দালাল। দালালের মাধ্যমে প্রতিটি কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন রেটে ঘুষ আদায় করা হয়। আর এদের সঙ্গে সখ্য রয়েছে বিআরটিএর বেশ কিছু অসাধু কর্মকর্তার। তাদের যোগসাজশেই দালালেরা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করছে। ফলে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

ভুক্তভোগী আজিমপুরের বাসিন্দা আলম বলেন, ‘দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু বাহির থেকে অন্য লোকজন ঢুকে নিজেদের কাজ করিয়ে নিচ্ছে। প্রতিবাদ করতে গেলে দুর্ব্যবহার করে। কক্ষ থেকে বের করে দেয়।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিআরটিএ অফিসে এলে দিনটাই মাটি হয়ে যায়। এখানে দালালকে টাকা দিলে সব ধরনের সেবা পাওয়া যায়। না দিলে ঘুরতে হয় দিনের পর দিন।

আলমের মতো আরেক ভুক্তভোগী জানান, বিআরটিএর বেশ কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালদের মধ্যে যোগসাজশের কারণে সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। তিনি বলেন, দালাল ছাড়া লাইসেন্স পাওয়ার চেষ্টা করাটাও যেন পাপ।

মিরপুর বিআরটিএ অফিসে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে এসেছেন রাজ্জাক নামের এক ব্যক্তি। তিনি প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর লাইসেন্স হাতে পেয়েছেন।

তিনি জানান, লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও দালালকে ১০০ টাকা দিতে হয়েছে লাইসেন্স পেতে। তিনি বলেন, অনেক সময় ২০০-৩০০ টাকা দালালদের মাধ্যমে কাউন্টারে ধরিয়ে দিলে খুব কম সময়ের মধ্যেই তারা লাইসেন্স দিয়ে দেয়।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, বিআরটিএ মিরপুর অফিসে সক্রিয় রয়েছে শতাধিক দালাল চক্র। এদের মধ্যে মনির, নেকবর, শামীম, নজরুলসহ বেশ কয়েকজন দালল খুব প্রভাবশালী। তাদের ছত্রছায়ায় অন্যরা মিরপুর অফিসে দালালি করে যাচ্ছে দিনের পর দিন।

ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার মিরপুরের বিআরটিএ কার্যালয়ে আসা আলাউদ্দিন জানান, ২০২১ সালে তার আয়ের একমাত্র সম্বল প্রাইভেট কারের ইঞ্জিন পরিবর্তনে আবেদন করলে শুধু সিল মেরে তারিখ দিয়ে পিছিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। কাজ তো হয়ইনি, বরং এর মধ্যে কেটে গেছে প্রায় চার বছর। আজও আসতে হয়েছে তাকে। এ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স হারিয়ে বিপাকে প্রবাসী মাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। তাকেও একইভাবে হয়রানি করা হয় কালক্ষেপণের মাধ্যমে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রবাসী হয়ে যদি এমন হয়রানি হওয়া লাগে, আমরা দেশে টাকা পাঠিয়ে কী লাভ? সেবা নিতে আসা একাধিক মানুষের প্রশ্ন, বিআরটিএ অফিসে দালালের উৎপাত কর্মকর্তাদের সেবার মান বাড়বে কী করে? সাধারণ মানুষের ভোগান্তি থেকেই যাবে।

জানতে চাইলে মিরপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক রাজিবুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ সব সঠিক নয়। এখন আর বিআরটিএতে এসব হয় না। যা হয় বাইরে। আর বাইরের দায়িত্ব আমাদের না। বিআরটিএর ভেতরে মাঝেমধ্যে দালাল প্রবেশ করলে তাদের ফের বের করে দেওয়া হয়।

মিরপুরে বিআরটিএ অফিসে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার কমান্ডার (পিসি) ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এখানে কোনো দালাল নেই। তবে বাইরে কিছু মানুষ রয়েছে। তারা দালালি করে আর আমাদের আনসারদের বদনাম হয়।

আরবি/জেডআর

Link copied!