বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রুবেল রহমান

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৪, ১২:১৪ পিএম

পদ্মায় বিপুল অর্থ সাশ্রয়

রুবেল রহমান

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৪, ১২:১৪ পিএম

পদ্মায় বিপুল অর্থ সাশ্রয়

ফাইল ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বাঁচিয়ে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা ফিরছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। রাজনৈতিক সরকার থাকলে এই টাকা ফেরত যেত না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে উন্নয়নের আড়ালে লুটপাট বেশি হয়েছে বলে মনে করে সাধারণ মানুষ।

রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগ সহজ করে দিয়েছে পদ্মা সেতু। তবে এই সেতু নির্মাণে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে শুরু থেকেই ছিল বিতর্ক। সাড়ে ৩২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম।

তবে এর মধ্যেও পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানান সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের সর্বশেষ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করায় এখন চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আওয়ামী লীগ শাসনামলে উন্নয়নের চেয়ে লুটপাট বেশি হয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নিরুপনা দাশ মনে করেন আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ঢেকে গেছে দুর্নীতিতে। তাদের উন্নয়ন চোখে পড়ে না এ কারণে যে, একেকজন মন্ত্রী হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে। ফ্যাসিবাদি সরকার পতনের পর সব আবার বিদেশে পালিয়েছে। তাদের ধরে এনে কঠিন শাস্তি দেওয়া উচিত। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আরাবি ইসলাম বলেন, প্রত্যেকটা মন্ত্রীকে তাদের বানানো আয়নাঘরে রাখা উচিত। ওবায়দুল কাদরকে সামনে রাখা উচিত। তবে যদি তাদের শিক্ষা হয়। দেশটাকে কি করেছে। জনগণকে দেখিয়েছে তোমাদের জন্য উন্নয়ন করছি। আসলে তারা তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন করেছে। লুটপাট করে দেশের সব টাকা নিয়ে গেছে বিদেশে। অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতিকে আমরা স্বাগত জানাই। সব প্রকল্প থেকে টাকা বাঁচিয়ে যদি রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে লাগে তাতেই মঙ্গল।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সেতু পদ্মা। এই সেতু নির্মাণে যে বেহিসাবি খরচ করেছিল আগের সরকার তাতে কিছুটা লাগাম টেনেছে অন্তর্বর্তী সরকার। দুর্নীতির লাগাম টেনে ব্যয় কমিয়ে উদ্বৃত্ত অর্থ ভিন্ন উন্নয়ন কাজে খরচ করতে পারলে যোগাযোগ খাতে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

ড. হাদিউজ্জামান মনে করেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমের অন্তত ২১ জেলার কয়েক কোটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। পদ্মা সেতু মানুষের সাথে মানুষের কানেক্টিভিটি বাড়িয়েছে। এই সেতু নির্মাণের আগে সময়ের অপচয় হতো। এক দিন দেড় দিন বসে থাকতে হতো পদ্মর পাড়ে। কারণ ফেরি পার হয়ে যেতে হতো। লম্বা লাইন দিয়ে ঈদের সময় সড়কে বসে থাকতে হতো পরিবারকে। কত ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে পরিবার নিয়ে। ঈদের সময় দুর্ঘটনাও ঘটেছে। খুশির ঈদ যাত্রা হয়েছে শবযাত্রা। ফেরি পারাপারে ছিল বিশাল ঝক্কিঝামেলা। অথচ পদ্মা সেতু নির্মাণের পর শরীয়তপুর, ফরিদপুরে যাওয়া যায় ২-৩ ঘণ্টায়। খুলনায় যাওয়া যায় ৪-৫ ঘণ্টায়। বরিশালে যাওয়া যায় ৫-৬ ঘণ্টায়।  যোগাযোগ খাতে বিপ্লব ঘটিয়েছে এই সেতু।

তবে এটা ঠিক পদ্মা সেতু নির্মাণে বেহিসেবি খরচ করে ফেলেছে আগের সরকার। এতটাই বেশি টাকা খরচ করেছে যা রীতিমতো বিতর্ক সৃষ্টি করে ফেলেছে। এই সেতু নির্মাণে প্রতি কিলোমিটার খরচ হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বের যেকোনো দেশের চাইতে এই সেতুর নির্মাণ ব্যয় অনেক বেশি। শুরু থেকেই বিতর্ক নিয়ে এগিয়েছে এই সেতু। তবে সময়মতো সেতু নির্মাণ করতে পারলে কিংবা দ্রুত নির্মাণ করতে পারলে খরচ আরও অনেক কম হতো। এত বড় স্থাপনায় লাখ লাখ টন রোড, সিমেন্ট লাগে বা অন্যান্য জিনিসপত্র লাগে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে কিছু মিশ্রণ আনতে হয়। সময় বাড়লে নির্মাণ পণ্যের দামও বাড়ে।  

উন্নয়ন প্রকল্পের যত সময় ক্ষেপণ করবে ততই খরচ বাড়বে। এ কারণে উন্নয়ন কাজ সময়মতো করতে হয়, বিদেশেও তাই হয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে প্রাইজ স্কেলেসন হচ্ছে। ফলে বড় অংকের টাকা ফেরত যাচ্ছে সরকারি কোষাগারে। রাজনৈতিক কোনো সরকার থাকলে হয়তো এই টাকা ফেরত যেত না, লুটপাট হয়ে যেত। সেতুর মুখ রক্ষা হয়েছে কিছু টাকা বাঁচিয়ে ফেরত দিয়েছে সরকারকে। লক্ষ্য করবেন সেতুতে যা যা করার কথা ছিল সবই করতে পেরেছে এই টাকা দিয়েই। যে টাকা সেভ হলো জনকল্যাণ কর্মকাণ্ডে সেই টাকা খরচ করা যাবে। নতুন কোনো প্রকল্পে ব্যয় করতে পারবে। এটি হয়েছে মূলত মনিটরিং মেকানিজমের কারণে। এই যে একটা উইন উইন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো এটি রাজনৈতিক সরকার করতে পারে না কিংবা করে না। সময়মতো কাজ শেষ করতে পারলে যোগাযোগ খাতে পরিবর্তন আনা সম্ভব।

দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারায় মানুষের মাঝে বেড়েছে কর্মক্ষমতা। মেগা প্রকল্পের ফুটপ্রিন্ট মেগা হতে হবে। অর্থনৈতিক করিডোর এখনো স্পষ্ট নয়। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ইকোনমিক জোনগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। তবে সেতু নির্মাণের পর প্রাইভেট সেক্টরে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সরকার এক ডলার ইনভেস্ট করলে প্রাইভেট সেক্টরেও ১ ডলার ইনভেস্ট করা উচিত। সেতুকে কেন্দ্র করে পদ্মার ওপাড়ে গার্মেন্টস শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেতে পারে। তাতে করে লোকাল এলাকায় কম টাকায় শ্রম পাবে। উৎপাদন খরচ কম হবে। কর্মসংস্থান হবে।  

এক পদ্মা সেতুর খরচে ভারতে ১০ সেতু নির্মাণ করা যায় বলে মনে করেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, ৬.১৫ কিলোমিটার এই সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরেছিল ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অন্যান্য দেশের সেতু নির্মাণের সঙ্গে তুলনা করলে পদ্মা সেতুকে বলতেই পারি গোল্ডেন সেতু। এই পদ্মা সেতুর মূল পরিকল্পনা করে ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নের কথা ছিল কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক চলে গেলে আওয়ামী লীগ এই সেতু নির্মাণের ভার নেয় এবং দফায় দফায় ব্যয় বাড়ায়। বাজেট বাড়তে বাড়তে দাঁড়ায় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আমরা যদি তুলনা করি ভারত, চীন, মালায়েশিয়া, ব্রুনাইয়ের সেতু নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয় ৫শ’ থেকে ৭শ’ কোটি টাকা। বুয়েটের এক শিক্ষকের গবেষণায় নদীর জটিল ভূপ্রকৃতির বিবেচনায় রেলসহ সেতু নির্মাণে সর্বোচ্চ ব্যয় হতে পারে ১৪শ’ কোটি টাকা। অথচ পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রতি কিলোমিটার ৫ হাজার কোটি টাকা। আমরা যদি ভুপেন হাজারিকা সেতুর দিকে তাকাই ৯ কিলোমিটার এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয় ১১শ’ কোটি রুপি অর্থাৎ ভারতে একটা পদ্মা সেতু নির্মাণ ব্যয় দিয়ে ৩০টা ভুপেন হাজারিকা সেতু নির্মাণ সম্ভব। আমরা যদি ভারতে গঙ্গা নদীর ওপর যে সেতু নির্মিত হচ্ছে ১০ কিলোমিটারের তার খরচ হচ্ছে তিন হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ একটা পদ্মা সেতুর ব্যয়ে ভারতে ১০টি সেতু নির্মাণ করা যায়। লুটপাট আর কাকে বলে। এমনি এক গোল্ডেন সেতু যার পরতে পরতে দুর্নীতি। এই গোল্ডেন সেতু দুর্নীতির এক উদাহরণ হয়ে থাকবে।

আরবি/জেআই

Link copied!