বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫, ০১:৫৫ এএম

সয়াবিন তেল উধাও

শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫, ০১:৫৫ এএম

সয়াবিন তেল উধাও

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চাহিদা হঠাৎ বাড়েনি, তবুও ভোজ্যতেলের সংকট। ঢাকার অধিকাংশ বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ নেই বললেই চলে। মিলছে শুধুই পাম ওয়েল। তা দিয়েই চলছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের সংসার। ঢাকার বাইরের বাজারেও সরবরাহ সংকটে বেড়েছে তেল-চালের দাম। তবে মিয়ানমার ও ভারত থেকে ৩৭ হাজার টন চাল আমদানির পরেও দাম বৃদ্ধিকে কৃত্রিম সংকট বলছেন অনেক ব্যবসায়ী।

চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে আমদানিপণ্যের সরবরাহ স্থিতিশীল হওয়ার কথা। কারণ সরকার পতনের পর প্রথম শুল্কছাড়ে আমদানি করা পণ্য কম দামে বাজারে বিক্রি করবেন বিক্রেতারা। ১৩ বছরের শীর্ষে থাকা মূল্যস্ফীতির আগুন থামাতে সরকারি ঘোষণা, রমজানে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য দিতে চায় সরকার। ফলে কমবে আমদানি করা সব ধরনের পণ্যের দাম।

এদিকে, দেশে চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আসছে রমজান মাস সামনে রেখে রাইস ব্র্যান অয়েল রপ্তানিতে ব্যবসায়ীদের নিরুৎসাহিত করছে সরকার। ফলে রাইস ব্র্যান অয়েল রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) আরোপের সুপারিশ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।

তার আগেই ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমেছে, বেড়েছে দামও। একই সঙ্গে বেড়েছে চালের দাম। ভারত ও মিয়ানমার থেকে বৃহস্পতিবার ৩৭ হাজার টন আমদানি করা সিদ্ধ চালের দুটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এর পরই ঢাকার বাজারে চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২-৩ টাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও বেড়েছে সর ধরনের চালের দাম।

চাল ব্যবসায়ীদের দাবি, বৃহৎ করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর অতিরিক্ত মজুতদারি বাজারে সংকট তৈরি করছে। এ নিয়ে সরকারের তেমন নজরদারিও নেই। বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ তাদের।

এদিকে, পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে এবং দাম আরও সাশ্রয়ী করতে ১৫ নভেম্বর তৃতীয় দফায় শুল্ক ছাড় দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবু আমদানিকারকেরা সরবরাহ বাড়াননি। বোতলজাত ভোজ্যতেল সয়াবিন ঢাকার বাজারে মিলছে না বললেই চলে। যা মিলছে, তা কারওয়ান বাজার থেকে অনেকে কিনে সংসার বা সংকটে দোকান চালিয়ে নিচ্ছেন। ঢাকার অধিকাংশ স্থানে বেড়েছে ফুটপাতের দোকান, তবে কমেছে বিক্রেতাদের মূলধন। 

ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আগে থেকেই তেলের সংকট ছিল। নতুন করে তৃতীয় দফা সরকারের শুল্ক ছাড়ের ঘোষণায় দাম আরও কমবে।

আরেকটি পক্ষ জানিয়েছে, সরকারের শুল্কছাড়ের ঘোষণার পরেই নতুন দামে তেল বিক্রি হবে ফেব্রুয়ারি মাসে। তার আগে সরবরাহ কমে যাওয়ায় মূল্যবৃদ্ধিকে সরকারকে অসহযোগিতার কথা বলেন তারা। 

তেল সরবরাহ ও চাল সম্পর্কে বিক্রেতা মেহেদী হাসান বলেন, ‘এক মাস ধরে সয়াবিন তেল পাচ্ছি না। আগে যা পাইতাম তা-ও এখন নাই। আসছে শুধু পাম ওয়েল। গ্রাহক চাইলেও দিতে পারি না।কারওয়ানজাবার থেকে নিজে গিয়ে কিছু আনি আর বেচি’বলেন তিনি।

ঢাকার বড় মাগবাজারের রাজ্জাক স্টোরের মালিক মেহেদী হাসান।

বিভিন্ন পণ্যের দোকানদার হিসেবে বলেন, মোটা চাল এখনো প্রতি কেজি ৬৮-৬৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিআর-আটাশ চাল পাওয়া যাচ্ছে খুবই কম। তবুও দাম আগের মতোই আছে। তবে সরু পাইজম চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। চালের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ কমেছে বলে জানান ঢাকার কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী বেলাল আহমেদ। তিনি বলেন, বিআর ২৮ চাল সাধারণ মানুষের খাবার। সেই চাল আমাকে ৪০ বস্তার অর্ডার দিলে ২০ বস্তাও দিতে পারব না। কারণ আমার মজুদ নেই। আগের দামেই আছে।

চাটখিল রাইস এজেন্সির মালিক রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, আমনের মৌসুমেই এবার চালের দাম বেড়েছে। তবে দুই মাস ধরেই এক দাম আছে। নতুন করে আর দাম বাড়েনি। নতু করে চিকন চালের দাম কেজিতে দুই টাকার মতো বেড়েছে।

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কাজীর দেউড়ি এলাকার মুদি দোকানি দেলোয়ার হোসেন জানান, গত ১৫ দিনের ব্যবধানে চালের দাম অনেক বেড়েছে। রহমান কাটারি (কাটারিভোগ) গতকাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৯০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও দাম ছিল ৮৫ টাকা। মিনিকেট আতপ ছিল ৭০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকায়। ৮৫ টাকার সিদ্ধ নাজিরশাইলের দাম উঠেছে ৯০ টাকায়। জিরাশাইল সিদ্ধ চালের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে এ চাল ছিল প্রতি কেজি ৭৫ টাকা। এখন বিক্রি করছি ৮২ টাকায়। মিনিকেট সিদ্ধ ছিল ৬০ টাকা। এখন প্রতি কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকায় উঠেছে, জানান এই খুচরা ব্যবসায়ী।

এদিকে, ঢাকার মগবাজার ও কারওয়ান বাজারে বেশির ভাগ দোকানে এখন বিক্রি কমেছে। সরকার পতনের পর ফুটপাতে দোকানের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তবে তাদের বেশি ভাগ অংশ মূলধনী সংকটে ভুগছেন বলেন ব্যবসায়ীরা।

বাজারে সরবরাহ বাড়ানো ও দাম কমানো নিয়ে এনবিআর জানায়, ভোজ্যতেলের আমদানি ব্যয় লিটারে ৪০-৫০ টাকা হ্রাস পাবে। সরকারের ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের নতুন নির্ধারিত প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৫ টাকা। তৃতীয় দফায় শুল্কছাড়ে বোতলজাত প্রতি লিটারের দাম ১৪০-১৪৫ টাকা হওয়ার কথা। সেখানে কৃত্রিম সংকটে তেল মিলছে না।

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ঢাকার কারওয়ান বাজারের শীর্ষ তেল সরবরাহকারী ব্যবসায়ী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক।

কিচেন মার্কেটে সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজের প্রধান হিসেবে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, পুষ্টি ছাড়া কোনো কোম্পানির তেল নেই। বসুন্ধরা ও এস আলম গ্রুপের তেল সরবরাহ বন্ধ। ভারতের আদানি গ্রুপের রূপচান্দা তেল এখন আসছে। এখানে তেল সরবারহ স্বাভাবিক আছে। তবে কেন খুচরা দোকামদার পাচ্ছে না এটা মাথায় আসছে না।

আন্তর্জাতিক মূল্য অনুসারে তেলের দাম নুতন করে নির্ধারণ করে সরকার। ৮ ডিসেম্বর আরো ৮ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য প্রতি লিটার ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করেছে প্রতি লিটার ১৫৭ টাকা। ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫২ টাকা।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাস্তবসম্মত বিশ্লেষণ শেষে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনারস অ্যান্ড ভেজিটেবল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিভিওআরভিএমএ) সভাপতি মোস্তফা হায়দার বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ইতিমধ্যে বেড়ে যাওয়ায় দেশে দাম সমন্বয় করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

রাইস ব্র্যান অয়েল রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ: এদিকে, রাইস ব্র্যান অয়েল রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) আরোপের সুপারিশ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যানকে এ চিঠি দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম প্রধান এ কে এম মকসুদুল আরেফীন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, আগত রমজানে স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হয়। বর্ধিত চাহিদা মোকাবিলায় আমদানি করা ভোজ্যতেলের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রাইস ব্রান অয়েল স্থানীয় চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এতে সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানিতে ব্যবহৃত বৈদেশিক মুদ্রার আনুপাতিক সাশ্রয় হবে। তাই আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে রাইস ব্র্যান অয়েলে রফতানি নিরুৎসাহিত করতে কমিশনের সুপারিশের ত্বরিত প্রতিফলন জরুরি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

আরবি/জেডআর

Link copied!