বাল্যবিবাহ প্রবণতা বেশি দেশের এমন তিন জেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেয়ে শিক্ষার্থীদের বাল্যবিবাহ রোধ করতে বিশেষ প্রকল্প হাতে নিচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
২৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটির অর্থায়ন করবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএফপিএ।
যার মাধ্যমে এই তিন জেলার ১ হাজার ৯৪টি মাধ্যমিক ও মাদ্রাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জীবনমুখী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করে দক্ষতা শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে অধিকার এবং শারীরিক সক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন করা হবে।
পাশাপাশি মানসম্পন্ন জেন্ডার-রেসপন্সিভ জীবনমুখী দক্ষতা শিক্ষা প্রদানের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার সক্ষমতাও বৃদ্ধি করা হবে।
কিশোরীদের জীবন পাল্টে দিতে এই প্রকল্পটির সহায়ক হলেও কর্মকর্তারা বাদ দেননি প্রকল্পের মাধ্যমে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ।
আন্তর্জাতিক শিক্ষা সফর ও সম্মেলনে যোগদান এবং দেশের ভেতরে ভ্রমণ আর নানা ভাতা-সম্মানিতে প্রকল্প থেকে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়নের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে প্রকল্পটি এখনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
প্রকল্প সূত্র জানায়, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বাগেরহাট ও গাইবান্ধা জেলায় বাল্যবিবাহ সবচেয়ে বেশি হয়। জেলাগুলোয় ৫০ শতাংশের বেশি মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হন।
এসব জেলার ১ হাজার ৯৪টি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালন করা হবে।
এর মধ্যে ৭৯৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আর ২৯৭টি মাদ্রাসা। আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হবে এই প্রকল্পের কার্যক্রম। যা শেষ হবে ২০২৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
এই প্রকল্পের জন্য এখনো প্রকল্প পরিচালকসহ অন্যান্য জনবল নিয়োগ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, প্রকল্পের জন্য পরিচালকের পাশাপাশি একজন করে সহকারী প্রকল্প পরিচালক, কম্পিউটার অপারেটর কাম হিসাবরক্ষক, অফিস সহায়ক ও ফাইন্যান্স অ্যান্ড এডমিন নিয়োগ করা হবে।
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) জরিপ মতে, ২০২৩ সালে দেশের ৩৯ হাজার ৭৮৮টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ৬০ জন শিক্ষার্থী।
এর মধ্যে টানা তিন বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এর মধ্যে ২০২৩ সালে ৭ লাখ ২৩ হাজার ৪৮৮ জন, ২০২২ সালে ৪০ হাজার ৫৭১ জন এবং ২০২১ সালে করোনার কারণে ৮৬ হাজার ৫২৮ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েছিল।
এর মধ্যে ২০২২ সালে প্রায় ৪০.৭৮ ভাগ এবং ২০২৩ সালে ৩২.৮৫ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ে।
দারিদ্র্যতা, নিরাপত্তা, স্কুলে পর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধার অভাব এবং সহিংসতার ঝুঁকির কারণে মেয়েদের ঝরে পড়ার হার বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আর স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের (এসভিআরএস) ২০২৩ সালের তথ্য অনুসারে, ২০-২৪ বছর বয়সি নারীদের মধ্যে ৪১ ভাগ বিবাহিত হয়েছেন ১৮ বছর বয়সের আগে। অর্থাৎ আইনমতে তাদের বাল্যবিবাহ হয়েছে।
প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জীবন দক্ষতার ওপর ১৩১ শিক্ষক ও মৌলিক কিশোর নেতাদের মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা, ২ হাজার ২৮২ জন বিদ্যালয় পর্যায়ের অভিভাবক ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বার্ষিক সভায় ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন বিদ্যালয় ক্যাম্পেইনে ৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, সামাজিক আচরণ ও পরিবর্তন ক্যাম্পেইনে ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা খরচ হবে।
এ ছাড়াও কিশোর-কিশোরীদের কর্নার ব্যক্তিগণের দৈনিক ভাতা ও ভ্রমণ ব্যয়ে খরচ হবে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষা সফর ও সম্মেলনে যোগদানের জন্য ৪০ লাখ, মাউশির কর্মীদের ভ্রমণ ও পর্যবেক্ষণের জন্য ১৮ লাখ, আউটসোর্সিংয়ের জন্য ১৫ লাখ টাকা, মাঠপর্যায়ে কৌশলগত সহায়তা প্রদান ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৩ কোটি ৮৮ লাখ, গবেষণা ও প্রতিবেদনের জন্য ৮০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
এতে দেখা যায়, প্রকল্পের বড় অংকের টাকা খরচ হবে ভ্রমণ আর গবেষণার নামে।
এ প্রসঙ্গে মাউশির মহাপরিচালক ড. এহতেসাম-উল হক বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। প্রকল্পটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখব।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন