ক্রিকেট মাঠে কিছু মুহূর্ত আসে যা কেবল খেলার অংশ নয়, তা হয়ে ওঠে ইতিহাসের অংশ। ১৯৪৮ সালের আজকের এইদিনে (১৪-ই আগস্ট) লন্ডনের দ্য ওভাল মাঠে তেমনই এক ঐতিহাসিক দিনের সাক্ষী হয়েছিল ক্রিকেট বিশ্ব।
এদিন বিকেল ৫:৫০ মিনিটে এক কিংবদন্তি ক্রিকেটার তার চূড়ান্ত টেস্ট ইনিংস খেলার জন্য প্যাভিলিয়ন থেকে মাঠে নেমেছিলেন, তিনি স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান।
তৎকালীন এক সংবাদপত্রের বর্ণনায় তাকে বলা হয়েছিল, ‘প্যাভিলিয়ন থেকে বেরিয়ে এলেন ছোট, স্বল্পদৈর্ঘ্য, ক্ষুদ্র দেহের মানুষ, যার নাম উজ্জ্বল আলোতে থাকবে, যতক্ষণই ক্রিকেট খেলা হবে।’
১৯ বছরের তরুণ অলরাউন্ডার নীল হার্ভে, যিনি ব্র্যাডম্যানের তুলনায় ২০ বছরের ছোট ছিলেন, সেই মুহূর্তটিকে স্মরণ করে বলেছিলেন, ‘প্যাভিলিয়নে বসে সব দেখছিলাম। মাঠ পুরো ভরে ছিল, সবাই তার জন্য উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিল।
এমনকি ইংরেজ দলও তাকে সম্মান জানাতে টুপি খুলে অভিবাদন জানায়। এমন সম্মান কাউকে প্রভাবিত না করে পারে না, ব্র্যাডম্যানও নিশ্চয়ই এতে অভিভূত হয়েছিলেন।’
শারীরিক অসুস্থতা উপেক্ষা করে মাঠে
ব্র্যাডম্যান মূলত ১৯৪৮ সালের এই সফরে যাওয়ার কথা ভাবছিলেন না। তিনি ফাইব্রোসাইটিসে ভুগছিলেন এবং স্বাস্থ্যগত কারণে ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু তিনি অনুভব করেছিলেন যে যুদ্ধ-পরবর্তী কঠিন সময়ে ইংরেজ দর্শকদের প্রতি তার একটি দায়বদ্ধতা আছে।
তিনি ইংরেজ জনগণকে হতাশ করতে চাননি। এই দায়বদ্ধতা থেকেই ৩৯ বছর বয়সে তিনি অস্ট্রেলিয়ার ‘ইনভিনসিবলস’ দলের নেতৃত্ব দেন এবং এই সফরে দুটি সেঞ্চুরিও করেন।
ক্রিকেটীয় শিল্পের চূড়ান্ত নিদর্শন
দ্য টাইমস লিখেছিল, ‘ব্র্যাডম্যানকে উইকেটে দেখা মানে ব্যাটিং শিল্পের নিখুঁততা উপভোগ করা।’
সংবাদপত্রে আরও বলা হয়েছিল, লারউডের তীব্র আক্রমণ, ভেরিটির চতুরতা, এবং শেষের দিকে বেডসারের ধৈর্যপূর্ণ বল—সবই তার অদ্ভুত তৎপরতা ও প্রতিক্রিয়ার পরীক্ষা নিল।
কিন্তু ব্র্যাডম্যানের ব্যাটিং ছিল যেন এক জীবন্ত অলৌকিক, কোনো রোবট নয়। তাঁর ব্যাটিংয়ে দক্ষতা, ধৈর্য এবং সৌন্দর্য সবকিছুই ফুটে উঠত।
মাত্র ৪ রানের জন্য অপূর্ণ থেকে যাওয়া রেকর্ড
এটিই ছিল ব্র্যাডম্যানের জীবনের শেষ টেস্ট ইনিংস। ২০,০০০ দর্শকের সামনে তিনি যখন মাঠে নামেন, তখন অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ১ উইকেটে ১১৭ রান।
প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড মাত্র ৫২ রান করায় অস্ট্রেলিয়াকে আর দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে হয়নি। এই ইনিংসের আগে ব্র্যাডম্যানের টেস্ট রান ছিল ৬,৯৯৬। তার গড় ছিল ১০১.৩৯।
মাত্র ৪ রান করলেই তিনি ৭,০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারতেন এবং তার ব্যাটিং গড় ১০০-এর উপরে থাকত। কিন্তু ভাগ্য হয়তো অন্য কিছু লিখে রেখেছিল।
কিন্তু তা আর হলো না ওই ম্যাচে ডাক মেরে বসেন ব্র্যাডম্যান। এই ইনিংসের পরই তার ক্রিকেট জীবনের সমাপ্তি ঘটে।
এই দিনটি কেবল একটি ক্রিকেট ম্যাচের শেষ নয়, বরং ক্রিকেট ইতিহাসের এক অসাধারণ অধ্যায়। স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের নাম তার অসামান্য ব্যাটিং দক্ষতা, নিষ্ঠা এবং খেলার প্রতি গভীর শ্রদ্ধার জন্য চিরকাল অম্লান থাকবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন