ঢাকা রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫

মাদাগাস্কারে জেন-জি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনী

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৫, ০৯:৩৬ এএম
জেন-জি আন্দোলনে সেনাবাহিনীর সংহতি। ছবি- সংগৃহীত

মাদাগাস্কারের রাজধানী আন্তানানারিভোতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনীর একাংশ। আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করা সেনা সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর সরকারি কোনো নির্দেশ মানবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। 

বার্তাসংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত মহাসাগরীয় এই দ্বীপরাষ্ট্রে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। এর মাঝেই শনিবার (১১ অক্টোবর) জেনজি নেতৃত্বাধীন নতুন বিক্ষোভে ব্যাপক জনসমাগম ঘটেছে। দেশটির গত কয়েক বছরের ইতিহাসে শনিবারের এই বিক্ষোভকে অন্যতম বৃহৎ বলে দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা।

রাজধানী আন্তানানারিভোতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার লক্ষ্যে পুলিশ স্টান গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা শহরের কেন্দ্রস্থল আনোসি হ্রদের কাছে বিক্ষোভকারীদের মাঝে উপস্থিত হয়। বিক্ষোভকারীরা সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেখে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান। এ সময় অনেক সৈন্যকে মাদাগাস্কারের জাতীয় পতাকা নেড়ে জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে দেখা যায়।

এর আগে শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত সোয়ানিরানা এলাকার এক সামরিক ঘাঁটিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেবেন না বলে ঘোষণা দেন। বৈঠকের পর এক ভিডিও বার্তায় তারা বলেন, ‘আসুন, সেনা, জেন্ডারম ও পুলিশ সবাই এক হই। আমাদের বন্ধু, ভাই ও বোনদের গুলি করে আমরা বেতন নেব না।’ ভিডিওতে বিমানবন্দরের দায়িত্বে থাকা সৈন্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, সব ধরনের বিমানের উড্ডয়ন বন্ধ রাখুন। এ ছাড়া দেশটির অন্যান্য সামরিক ঘাঁটির সৈন্যদের উদ্দেশে তারা বলেন, ‘সহযোদ্ধাদের গুলি করার নির্দেশ অমান্য করুন।’

সেনাবাহিনীর সদস্যরা ভিডিওতে আরও বলেন, ‘সব ঘাঁটির দরজা বন্ধ করে আমাদের নির্দেশনার অপেক্ষা করুন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশ মানবেন না। যারা আমাদের সহযোদ্ধাদের গুলি করতে বলে, অস্ত্র তাক করুন তাদের দিকেই। কারণ আমরা মারা গেলে তারা আমাদের পরিবারের দায়িত্ব নেবে না।’
দেশটিতে তরুণদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া আন্দোলন প্রথমে বিদ্যুৎ ও পানির সংকট থেকে শুরু হলেও বর্তমানে তা বৃহত্তর সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের আহ্বানে ঠিক কতজন সৈন্য সাড়া দিয়েছেন, সেটি পরিষ্কার নয়।

২০০৯ সালে সোয়ানিরানা ঘাঁটির সৈন্যরা দেশটিতে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন; যার মধ্য দিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা ক্ষমতায় আসেন। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নবনিযুক্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল দেরামাসিনজাকা মানানৎসোয়া রাকোতোআরিভেলো সৈন্যদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যারা আমাদের সঙ্গে একমত নন, তাদের বলব সংলাপকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সেনাবাহিনী দেশের মধ্যস্থতাকারী এবং জাতির শেষ প্রতিরক্ষা রেখা।

সহিংস দমন অভিযান
বৃহস্পতিবার পুলিশের টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাঁজোয়া গাড়ি ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুলিশের সহিংসতার বহু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ধাওয়া খেয়ে এক ব্যক্তি মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেছেন।

এর আগে, শুক্রবার দেশটিতে চলমান বিক্ষোভে অপ্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলেছে, জেন জি নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের আহ্বানে ২৫ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এই বিক্ষোভের প্রথম দিকেই অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা অবশ্য বিক্ষোভে প্রাণহানির এই সংখ্যা অস্বীকার করেছেন। বুধবার তিনি বলেছেন, ১২ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে এবং তারা সবাই লুটপাটকারী ও দাঙ্গাবাজ ছিলেন।

প্রথমে রাজোয়েলিনা নরম অবস্থান নিলেও পরবর্তীতে দেশটির পুরো মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত করেন। এরপর তিনি আরও কঠোর হন। গত ৬ অক্টোবর এক সামরিক কর্মকর্তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন এবং নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম সদস্য হিসেবে সেনা, পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর অন্যান্য কর্মকর্তাদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বলেন, দেশে আর কোনো বিশৃঙ্খলা চলবে না।

বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি মাদাগাস্কার। স্বাধীনতার পর ১৯৬০ সাল থেকে ঘন ঘন গণআন্দোলনের মুখোমুখি হয়েছে। ২০০৯ সালের গণবিক্ষোভে তখনকার প্রেসিডেন্ট মার্ক রাভালোমানানাকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় বসায় সেনাবাহিনী। তিনি ২০১৮ ও ২০২৩ সালে পুনর্নির্বাচিত হন; যদিও শেষ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিরোধীদল।