ঢাকা সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫

মিয়ানমারে মে-আগস্টে ৬৩৭ বেসামরিক গণহত্যার শিকার

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৫, ১১:১২ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

মিয়ানমারে চলতি বছরের মে থেকে আগস্টের মধ্যে কমপক্ষে ৬৩৭ জন বেসামরিক নাগরিক গণহত্যার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে নিয়ান লিন থিট অ্যানালিটিকা গ্রুপ।

বুধবার (৮ অক্টোবর) প্রকাশিত সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের ৩৮টি শহরতলিতে সংঘটিত ৬৮টি হত্যাযজ্ঞের ঘটনা তারা নথিভুক্ত করেছে। এসব ঘটনাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এমন হত্যাযজ্ঞ হিসেবে, যেখানে একসঙ্গে পাঁচ বা তার বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব ঘটনার মূল অপরাধীদের মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী, জান্তাপন্থী মিলিশিয়া, সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠী এবং কিছু অজ্ঞাত সশস্ত্র দল। ৬৮টি ঘটনার মধ্যে ৬৬টি সরাসরি জান্তা-নিয়ন্ত্রিত বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত। একটি ঘটনায় প্রতিরোধ যোদ্ধারা জান্তা কর্মকর্তাদের আত্মীয়দের লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালিয়েছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অ্যানালিটিকা গ্রুপের তথ্যে দেখা যায়, জান্তা বাহিনীর বিমান হামলাতেই সবচেয়ে বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে, ৩৯টি ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। স্থল অভিযান ও গ্রাম অনুপ্রবেশের সময় আরও ১৩টি গণহত্যার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া জান্তা বাহিনী ও প্রতিরোধ গোষ্ঠীর সংঘর্ষের মধ্যে অন্তত পাঁচটি ঘটনায় ব্যাপক হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

সবচেয়ে বেশি বেসামরিক মৃত্যু ঘটেছে সাগাইং অঞ্চলে, যেখানে একাধিক গণহত্যায় দুই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। উত্তর শান রাজ্য, ম্যাগওয়ে, বাগো (পূর্ব) ও তানিনথারি অঞ্চলও উচ্চমাত্রার সহিংসতার শিকার হয়েছে। এসব অঞ্চলে কামানের গোলা, বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের ফলে অসংখ্য বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।

প্রতিবেদনে মান্দালয় অঞ্চলে কারাগারের ভেতরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাও তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে বহু বন্দি নিহত ও আহত হন।

নিয়ান লিন থিট অ্যানালিটিকা জানিয়েছে, অধিকাংশ গণহত্যার পেছনে রয়েছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী এবং তাদের মিত্র পিউ সাও তি মিলিশিয়া। এসব গোষ্ঠী বিদ্রোহীদের ঘাঁটি ও পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর আশপাশে অভিযান চালিয়ে বেসামরিক জনগণকে জিম্মি করেছে, গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে এবং প্রায়শই বেসামরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বিপ্লবী সংগঠনের বিবৃতি এবং ৪০টি স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১ সালে জান্তার ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমারে গণহত্যার সংখ্যা প্রতি বছরই বেড়েছে। ওই বছর ৫৭০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন, ২০২২ সালে ৬১২ জন, ২০২৩ সালে ৯৩৯ জন এবং ২০২৪ সালে এক হাজার ৪৮৪ জন। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আরও অন্তত এক হাজার ১২২ জন বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিসংখ্যান জান্তা শাসনের অধীনে মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে, যেখানে সামরিক বাহিনী কেবল সশস্ত্র প্রতিরোধ নয়, সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধেও অপ্রতিরোধ্য সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে।