ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

পাক-আফগান: সামরিক সক্ষমতায় কে এগিয়ে?

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ০৭:৩৮ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

সরাসরি সংঘাতের আশঙ্কায় এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সামরিক সক্ষমতা। দুই দেশের সমরশক্তি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। প্রশ্ন উঠছে, ইসলামাবাদের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধ বাধলে কতক্ষণ টিকতে পারবে কাবুল?

পরিসংখ্যান বলছে, সেনা, বিমান কিংবা নৌ-শক্তি সব দিকেই তালেবানের তুলনায় বহু গুণ এগিয়ে পাকিস্তান। তবে তালেবান যোদ্ধাদের গেরিলা কৌশলের কারণে মাঠের যুদ্ধে বেশ ভুগতে হতে পারে পাকিস্তানি বাহিনীকে।

একসময়ের মিত্র হলেও এখন সম্পর্কটা সাপে-নেউলের। স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ধারাবাহিকভাবে সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে পাকিস্তান। অন্যদিকে, দীর্ঘ যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিদেশি হস্তক্ষেপের কারণে আফগানিস্তান কখনোই স্থায়ী সামরিক কাঠামো গড়ে তুলতে পারেনি। ফলে দুই দেশের সামরিক সক্ষমতার ব্যবধান আজ বিশাল।

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, পাকিস্তান বিশ্বের ১২তম শক্তিশালী সেনাশক্তির অধিকারী, আর আফগানিস্তান আছে ১১৮ নম্বরে অর্থাৎ তালিকার একদম নিচের দিকে। পাকিস্তানের সেনাসদস্য প্রায় ১৭ লাখ, যার মধ্যে সক্রিয় আছেন সাড়ে ৬ লাখের বেশি। অপরদিকে, আফগানিস্তানের হাতে আছে আনুমানিক দেড় লাখ তালেবান যোদ্ধা, যাদের প্যারামিলিটারি বাহিনী হিসেবে ধরা হয়।

তালেবানদের কাছে মার্কিন সেনাদের ফেলে যাওয়া কিছু সামরিক যান থাকলেও তা পাকিস্তানের বিশাল অস্ত্রভান্ডারের তুলনায় নগণ্য। ইসলামাবাদের কাছে ট্যাংকই আছে দুই হাজারের বেশি, আর সামরিক যানবাহন ১৭ হাজারের বেশি। তবে গেরিলা কৌশলে তালেবানরা নিপুণ, যা তাদেরকে ময়দানে সুবিধা এনে দিতে পারে।

আকাশপথে সক্ষমতার দিক থেকে আফগানিস্তান অনেক পিছিয়ে। পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান তিন শতাধিক, যেখানে কাবুলের হাতে একটি ফাইটার জেটও নেই। তালেবানের হাতে আছে মাত্র ছয়টি হেলিকপ্টার, যার মধ্যে একটি অ্যাটাক হেলিকপ্টার। যুক্তরাষ্ট্রের ফেলে যাওয়া কিছু বিমান থাকলেও সেগুলো সীমিত ব্যবহারের উপযোগী। অন্যদিকে, পাকিস্তান বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার সংখ্যা ৩৭৩টি, যার মধ্যে অর্ধশতাধিক সম্পূর্ণ যুদ্ধসক্ষম।

নৌ-ক্ষমতার দিক থেকেও পাকিস্তান অনেক এগিয়ে। আফগানিস্তান স্থলবেষ্টিত দেশ হওয়ায় তাদের কোনো নৌবাহিনী নেই। পাকিস্তানের নৌবাহিনীতে রয়েছে ১২১টি সামরিক জাহাজ। এর মধ্যে ফ্রিগেট, সাবমেরিন ও টহলজাহাজ অন্তর্ভুক্ত।

শুধু অস্ত্রশস্ত্র নয়, প্রতিরক্ষা ব্যয়েও পাকিস্তান অনেক এগিয়ে। দেশটি প্রতিবছর প্রায় ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে সামরিক খাতে। বিপরীতে, তালেবান সরকারের সামরিক বাজেট মাত্র ২৯ কোটি ডলার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও তুরস্কের সহযোগিতায় পাকিস্তান তার সামরিক কাঠামোকে আধুনিকায়ন করেছে। বিপরীতে দীর্ঘ যুদ্ধ, অর্থনৈতিক সংকট ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে আফগানিস্তান এখনো সেই সামর্থ্য অর্জন করতে পারেনি। ফলে যুদ্ধের কাগজে-কলমে পাকিস্তান অনেক শক্তিশালী হলেও, বাস্তব ময়দানে তালেবানদের অপ্রচলিত যুদ্ধকৌশল ইসলামাবাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।