ঢাকা শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫

দনবাসের প্রবেশদ্বার পোকরোভস্ক ঘিরে ফেলেছে রাশিয়া

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৫, ১০:৫২ এএম
বিশকেকে পুতিন। ছবি- সংগৃহীত

রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর পোকরোভস্ককে ঘিরে ফেলেছে এবং শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) এমনটাই জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে ইউক্রেনের সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, তাঁদের বাহিনী শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে এবং শহরের কেন্দ্রেই ভয়াবহ লড়াই চলছে।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে রাশিয়া পোকরোভস্ক দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। রাশিয়া শহরটিকে তার পুরোনো সোভিয়েত নাম ‘ক্রাসনোআরমেইস্ক’ বলে ডাকে। দনবাসের বিস্তৃত শিল্পাঞ্চল পুরোপুরি দখলে নেওয়ার অংশ হিসেবেই এই অভিযান।

একসময় ৬০ হাজারের বেশি মানুষের বাস ছিল পোকরোভস্কে। ইউক্রেনীয় সেনার সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য শহরটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সরাসরি বড় হামলা চালানোর বদলে রাশিয়া পিঞ্চার কৌশল ব্যবহার করছে। প্রথমে ছোট ছোট দলে, পরে বড় আকারে হামলাকারী দল পাঠিয়ে শহরটিকে ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলেছে।

রাশিয়ার দাবি, রুশ গণমাধ্যমে ‘দোনেৎস্কের প্রবেশদ্বার’ বলে পরিচিত পোকরোভস্ক দখল করতে পারলে সেখান থেকে উত্তরের দিকে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা দুই বড় শহর ক্ৰমাতোরস্ক ও স্লোভিয়ানস্কের দিকে অগ্রসর হওয়া সহজ হবে।

এমন সময় এই চাপ তৈরি হয়েছে যখন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী এই সংঘাতের শান্তি–সমাধান খুঁজতে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে। দুই পক্ষই ময়দানে নিজেদের শক্ত অবস্থান দেখাতে চাইছে।

বৃহস্পতিবার কিরগিজস্তানে সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, পোকরোভস্ক ও পাশের শহর মিরনোহ্রাদে ইউক্রেনীয় সেনারা গভীর সংকটে পড়েছে এবং ইউক্রেনের সম্মুখসার কিছু জায়গায় ভেঙে পড়তে পারে। তিনি বলেন, ‘ক্রাসনোআরমেইস্ক (পোকরোভস্ক) আর দিমিত্রোভ (মিরনোহ্রাদ) পুরোপুরি ঘেরাও হয়ে গেছে। কিয়েভের সবচেয়ে লড়াকু বাহিনী এখানে ধ্বংস হচ্ছে।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘ক্রাসনোআরমেইস্কের ৭০ শতাংশ এখন রুশ বাহিনীর হাতে। দিমিত্রোভ শহরের দক্ষিণে ইউক্রেনীয় সেনাদের বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তারা শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের বাহিনী এখন ধাপে ধাপে তাদের ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে।’

এর আগে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের হামলাকারী ইউনিট পোকরোভস্কের কেন্দ্র এবং উত্তরাংশে অগ্রসর হয়েছে। মিরনোহ্রাদের পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ অংশেও অগ্রগতি হয়েছে।

অন্যদিকে ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ওলেক্সান্দর সিরস্কি জানান, তাঁদের বাহিনী পোকরোভস্ক এবং মিরনোহ্রাদে রাশিয়ার নতুন হামলার চেষ্টা ব্যর্থ করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, রাশিয়া বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত রিজার্ভ বাহিনী নিয়ে এসেছে। ইউক্রেনের ‘পূর্বাঞ্চলীয় অভিযান বাহিনী’ জানায়, পোকরোভস্ক রেলস্টেশনের দক্ষিণে তাদের সেনারা পাল্টা অভিযান চালাচ্ছে এবং শহরের কেন্দ্রজুড়ে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে।

রয়টার্স জানায়, দুই পক্ষের পরস্পরবিরোধী দাবির স্বাধীন যাচাই করা সম্ভব হয়নি। দু’পক্ষের প্রকাশিত মানচিত্রও একে অন্যের বিপরীত।

রুশ মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে, পোকরোভস্ক রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে এবং মিরনোহ্রাদে ইউক্রেনীয় বাহিনী ঘেরাও হয়ে আছে। ইউক্রেনের মানচিত্রে পোকরোভস্ক ‘ধূসর অঞ্চল’, অর্থাৎ কেউ পুরো নিয়ন্ত্রণে নেই, আর মিরনোহ্রাদও পুরো দখলে নয়।