ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫

মৌসুমি বায়ু ও নিম্নচাপে ভারি বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ০১:২০ এএম

দেশজুড়ে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে মৌসুমি বায়ু। এতে গত রোববার রাত থেকে রাজধানী ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আগামী পাঁচ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দমকা হাওয়াসহ বজ্রসহ ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অন্যদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। জোয়ারের পানি বেড়ে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। এতে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমি। 

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ভারি বৃষ্টিতে দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতাও হতে পারে। গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এ তথ্য জানায়।
আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা জানান, মধ্যপ্রদেশ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে লঘুচাপে পরিণত হয়ে মৌসুমি বায়ুর অক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।

তিনি আরও জানান, গতকাল সকাল থেকে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

এদিকে রাজধানীতে গত রোববার সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি থেমে থেমে চলেছে গতকালও। রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের এলাকায় গতকাল সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। এতে কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলে বিঘœ ঘটে। অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমুখী মানুষজনকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বৃষ্টির কারণে নগরের প্রবর্তক মোড়, রেয়াজুদ্দিন বাজার, তিনপোলের মাথা, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, চান্দগাঁও, জুবিলি রোড, ওয়াসা, জিইসি মোড়, হালিশহর, পাঁচলাইশ মোড়, আতুরার ডিপো, মোহাম্মদ আলী রোড, আগ্রাবাদ, বিবিরহাট এলাকায় হাঁটুপানি জমেছে। জলাবদ্ধতার কারণে যানবাহনগুলো চলছে ধীরগতিতে। বিভিন্ন স্থানে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিকল হয়ে রাস্তায় সাময়িক যানজটের সৃষ্টি হয়। আখতারুজ্জামান উড়ালসড়কেও পানি জমে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৫৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া আমবাগান আবহাওয়া কেন্দ্রে একই সময়ে রেকর্ড করা হয়েছে ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা জানিয়েছেন, খাল, নালা পরিষ্কার রয়েছে। তবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হওয়াতে বিভিন্ন স্থানে পানি উঠেছে। এতে পানি নিষ্কাশনে ব্যাঘাত ঘটছে।
অন্যদিকে নি¤œচাপের প্রভাবে সাগরের জোয়ারের জলে সেন্টমার্টিনে বেশকিছু ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে উল্লেখ করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন জানিয়েছেন, সাগর উত্তাল থাকায় নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নৌযান চলাচল শুরু হবে।

এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও উত্তালের কারণে টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কের অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুইদিনে জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে সাবরাং ইউনিয়নের বাহারছড়া ঘাট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের অন্তত দশটির বেশি স্থানে ভাঙনের খবর মিলেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মেরিন ড্রাইভে ভাঙনের পেছনে একটি বড় কারণ জায়গা ভরাটে সমুদ্র থেকে বালু তোলা। তারা জানান, ট্যুরিজম পার্ক গড়ে ওঠায় জমির দাম বাড়ায় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু তুলে জমি ভরাট করছেন। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি জমি ভরাটও করছে। এতে সড়কের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে।

সাবরাং ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সেলিম জানান, এলাকাবাসীর কাছ থেকে ভাঙনের খবর পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্টদের অবগত করা হয়েছে। 

অন্যদিকে সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দ্বীপবাসী বলছে, বৃষ্টিপাত কম হলেও সাগরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের আঘাতে দ্বীপের মাঝেরপাড়া, পশ্চিমপাড়া, গোলাপাড়া ও পূর্বপাড়ার চারপাশ ভেঙে গেছে। এখানকার দুই শতাধিক বাসিন্দার ঘরবাড়ি এখনো পানিবন্দি হয়ে আছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান ফয়েজুল জানিয়েছেন, নি¤œচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ২০০ ঘর-বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ১০টির বেশি ঘরসহ বেশকিছু গাছ ভেঙে গেছে।