মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার কালীপুরা এলাকাসংলগ্ন মেঘনা নদীর একটি অবৈধ বালুমহালের কর্তৃত্ব নিয়ে স্থানীয় দুটি সন্ত্রাসী দলের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এ সময় আধিপত্য বিস্তারে দুপক্ষই পাল্টাপাল্টি গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষে লালু গ্রুপের আব্দুল মান্নান ওরফে শুটার মান্নান (৩৮) প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
গতকাল সোমবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরও অন্তত ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- মো. হামিম (২৫), মো. হৃদয় বাগ (২৮), মো. হাসিব (২৬), আতিকুর (৩০) ও নয়ন (২৫)। তাদের প্রত্যেকের বাড়ি গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের হোগলাকান্দি গ্রামে।
তারা মুন্সীগঞ্জ আদালতে আগের মামলার হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় এ হামলার শিকার হন বলে জানা গেছে। নিহত মান্নান ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলার আসামি ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানায়, একটি ইঞ্জিনচালিত কাঠের ট্রলারে নদীপথে যাওয়ার সময় আগে থেকে ওত পেতে থাকা প্রতিপক্ষ সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই মান্নান নিহত হন। ট্রলারের ভেতর একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন, সিগারেটের প্যাকেট ও সোলার সিস্টেম পাওয়া যায়।
নিহতের স্ত্রী সুমি বেগম দাবি করেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই লালু বাহিনীর সদস্যরা তার স্বামীকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। আমার স্বামী অপরাধ করলে আইন আছে, আদালত আছে, তারা বিচার করত। কিন্তু লালু বাহিনী কেন তাকে মেরে ফেলল। তবে মান্নানের সঠিক স্থায়ী ঠিকানা সম্পর্কে স্ত্রী প্রশ্ন করলে কোনো স্পষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। একবার বলেন দাউদকান্দি, আবার বলেন নারায়ণগঞ্জ।’
স্থানীয়রা জানায়, মান্নানের জন্মস্থান গজারিয়ায় না হলেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের জষ্টিতলা গ্রামে বসবাস করতেন এবং সম্প্রতি গজারিয়াতে ভোটার হন। তার একমাত্র ছেলে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে মায়ের সঙ্গে থেকে স্থানীয় একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই মেঘনা নদীতে বালুর টাকা ভাগবাটোয়ারা, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লালু গ্রুপ ও মান্নান গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছিল। আজকের গুলির ঘটনাও সেই বিরোধের ধারাবাহিকতা। তারা আরও জানান, গ্রামে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য এ দুই গ্রুপই দায়ী।
গজারিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির এসআই জাহাঙ্গীর হাসান জানান, নিহত মান্নানের পেট ও বুকের দুটি স্থানে ছিদ্র রয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে গুলির আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে। বিস্তারিত তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (পিআইবি) ঘটনাস্থলে আসছে বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে গজারিয়া থানার ওসি আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, মান্নানের স্ত্রীর দাবি লালু বাহিনী তার স্বামীকে হত্যা করেছে। তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।