উত্তরবঙ্গের অনন্তকালের বাজেট বৈষম্য নিরসনের দাবিতে মডার্ন মোড় ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল সোমবার দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে একটি মিছিল বের করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে মডার্ন মোড়ে গিয়ে সড়কের দুই দিকে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ছয় দফা দাবির লক্ষ্যে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন বলেন, ‘বিপ্লবী এবং বিদ্রোহী নগরী এ রংপুর। রংপুর থেকে বিপ্লব সংঘটিত হলেও উত্তরবঙ্গের মানুষ আমরা এখনো অবহেলিত। এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও সেটি অব্যাহত রয়েছে।’
বৈষম্য দূর করতে যে আন্দোলন করেছি, সেটি এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। মূলত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর এ ব্লকেড কর্মসূচি করেছে। রংপুরের বৈষম্য দূর করতে মডার্ন মোড়ে ব্লকেড আন্দোলন কর্মসূচি করেছে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ইনকিলাব আহ্বায়ক জাহিদ হাসান জয় বলেন, আবু সাঈদের রক্তের বাংলাদেশ বৃথা যেতে দেব না। ২৪ গণঅভ্যুত্থানের পর কেন বৈষম্য করা হলো। এখন পর্যন্ত রংপুরে কোনো বাজেট দেওয়া হয়নি।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ‘রংপুর সিটি করপোরেশন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ ৬ দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অবহেলিত উত্তরবঙ্গের বৈষম্য নিরসন করে বাজেট দিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এ দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হবে আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
সাধারণ শিক্ষার্থী সালমা আক্তার বলেন, ‘আমরা এত বড় আন্দোলন করে দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেলাম কিন্তু আমাদের সে অবদান মূল্যায়ন করতে পারেনি। উত্তরবঙ্গের মধ্যে একটাই বিশ্ববিদ্যালয় সেটি হচ্ছে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট এখন শূন্যের পথে। ঢাকাসহ দক্ষিণবঙ্গে যদি আমরা দেখি সেখানে বড় বড় বাজেট দেওয়া হয়েছে। সে তুলনায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন কোনো বাজেট দেওয়া হয়নি। এখানে শূন্য বাজেটে নেমে গেছে।’
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. শওকত আলী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বৈষম্য নিয়ে, সেটি তাদের যৌক্তিক দাবি। সেটার সঙ্গে আমিও একমত পোষণ করি, তবে এটার সঙ্গে আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের একটি পার্ট, সে অনুযায়ী তাদেরও আহ্বান জানাচ্ছি। যে উত্তরবঙ্গ আসলেই অবহেলিত সেটা যেন তারা পজিটিভ দেখে এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা যে আশ্বাস দিয়েছেন, এ কাজগুলো বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে করে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত ১২ বছরে আগের ভিসি যারা ছিলেন, কোনো উন্নয়ন প্রকল্প জমা দেওয়া হয়নি। আমি যোগ দেওয়ার পর এই প্রথম বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকটসহ উন্নয়ন অবকাঠামো নিয়ে প্রকল্প জমা দিয়েছি। সেটি পাসও হয়েছে। আমরা আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হবে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা এ দৃশ্যমান কাজের চিত্র দেখতে পারবে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রহমত আলী, শামসুর রহমান সুমন, আল আমিন, জয়, শামসুন্নাহারসহ সব সাধারণ শিক্ষার্থী।
উল্লেখ্য, বিগত সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে পিছিয়ে ছিল রংপুর। এ পর্যন্ত রংপুরের বৈষম্য দূর করতে পারেনি তারা। উত্তরবঙ্গের বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যেই বিভিন্ন আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। ২৪ গণঅভ্যুত্থানের পরেও এখনো অবহেলিত রংপুরে বৈষম্য রয়েছে।