প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৪ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিল সাতক্ষীরার ক্ষুদে ফুটবলাররা। এতে তারা দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পাশাপাশি অপরাজিত ছিলেন। ফলে শিরোপা জয় করে চ্যাম্পিয়নের মুকুট ছিনিয়ে দেশে আনলো তারা।
রোববার (১০ আগস্ট) ব্যাংককের এক্কামাই ইন্টারন্যাশনাল স্কুল মাঠে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
অনূর্ধ্ব-১৪ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামের মাঠে বেড়ে ওঠা ১০ ক্ষুদে ফুটবলার অংশ নিতে গত বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন।
ওই খেলায় সাতক্ষীরার হয়ে খেলেন— আলিফ জামান, সোহাগ হোসেন, সিয়াম ইসলাম, মারুফ বিল্লাহ, আজিজুর রহমান ভূঁইয়া, মুকিদুরজ্জামান, প্রিয়ম বিশ্বাস, রিফাত পারভেজ, নুর হোসেন ও সালাহউদ্দিন রনি।
জানা যায়, সাতক্ষীরার এই ক্ষুদে ফুটবলাররা খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচে ৩-০ গোলে হারায় স্বাগতিক ব্যাংকক সকার একাডেমিকে। গোল করেন সিয়াম ইসলাম (২) ও সালাহউদ্দিন রনি (১)। দ্বিতীয় ম্যাচে ফিলিপাইন ফুটবল একাডেমিকে ২-১ গোলে হারায় ওয়ারিয়ররা। এ ম্যাচে নুর হোসেন ও সিয়াম ইসলাম একটি করে গোল করেন।
ফাইনালে আবারও মুখোমুখি হয় ব্যাংকক সকার একাডেমির সঙ্গে। সেখানে সিয়াম ইসলাম, নুর হোসেন ও মুকিদুরজ্জামানের এক এক গোলের সৌজন্যে ৩-০ ব্যবধানে জয় পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশের ক্ষুদে ফুটবলাররা।
চ্যাম্পিয়ন দলকে মেডেল, সার্টিফিকেট এবং ট্রফি প্রদান করা হয়।
এরা সবাই সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত গ্রামের মাটির গন্ধে বড় হওয়া বাংলাদেশের নারী ফুটবলের এক উজ্জ্বল প্রতীক। দীর্ঘদিন জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে মাঠ মাতিয়ে আসা সাবিনা খাতুনের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ওয়ারিয়র স্পোর্টস একাডেমির ছাত্র। আজ তারা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা রেখে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করলো।
বর্তমানে ভুটানের নারী ফুটবল লিগে পারো এফসির হয়ে খেলছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সাবিনা খাতুন। সেখান থেকে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সাবিনা বলেন, ‘আমার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল— আমাদের গ্রামের ছেলেমেয়েরা যেন বিদেশের মাঠে দাঁড়িয়ে লাল–সবুজের পতাকা উড়াতে পারে। আজ ওয়ারিয়রদের হাতে ট্রফি দেখে মনে হচ্ছে, সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। এই জয় শুধু গোলের হিসেবে নয়, এটি তাদের সাহস, ঘাম আর বিশ্বাসের জয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ বাংলা ট্র্যাক সল্যুশন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং রয়্যাল ওরাঞ্জের প্রতি— তারা শুধু অর্থায়ন করেনি, তারা আমাদের স্বপ্নে হাত ধরেছে। এই সাফল্যে তারা সমান অংশীদার। আমরা একসাথে প্রমাণ করলাম, সুযোগ পেলে বাংলাদেশের শিশুরা বিশ্ব মঞ্চেও আলো ছড়াতে পারে।’
২০২১ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করা ওয়ারিয়র স্পোর্টস একাডেমি বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ওয়ান স্টার মর্যাদা পেয়েছে। বয়সভিত্তিক প্রশিক্ষণ, স্থানীয় প্রতিযোগিতা ও প্রতিভা বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা এই দলের কোচ পিন্টু কুমার মিত্র, সহকারী কোচ সিরাজ উদ্দিন, ট্রেইনার ফেরদৌস খোকন, ম্যানেজার মেহেদী হাসান ও টিম লিডার তৌসিফ ইসলাম— সফরের প্রস্তুতিতে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন