রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) সেই পিস্তল সোহাগের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক হত্যা মামলার সন্ধান মিলেছে। তার প্রকৃত নাম মো. সোহাগ। তিনি পকেটে পিস্তল রাখেন সব সময়। এমনকি রাজউকে অফিসও করেন পিস্তল নিয়ে। এ কারণে তার নাম হয়েছে পিস্তল সোহাগ। এ নামেই রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি।
গত ২৭ নভেম্বচর, ২০২৪ ‘রাজউকের পিস্তল সোহাগ’ শিরোনামে রূপালী বাংলাদেশ পত্রিকার শেষের পাতায় পিস্তলের সঙ্গে তার জাল-জালিয়াতি ও দুর্নীতির বিস্তারিত কাহিনি প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে তার সম্পর্কে নানা চমকপ্রদ গল্পগাথা আসতে শুরু করে। রূপালী বাংলাদেশের হাতে একটি শিউরে ওঠা হত্যা মামলার খবর আসে। হত্যাটি আবার রাজনৈতিক।
খবর অনুযায়ী, রাজধানীর পল্টন থানায় তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। মামলা নম্বর-৪৮, তাং-৩০/০৯/২০২৪। বাদী মাহফুজার রহমান। ধারা- ১৪৩/ ১৪৪/ ১৪৯/ ৩৪২/ ৪২৭/ ৩৮৪/ ৩২৩/ ৩২৬/ ৩০৭/ ৩০২/ ১০৯/ ১১৪ ফৌজদারি কার্যবিধি। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হন সাব-ইন্সপেক্টর নাজমুল। আসামি পিস্তল সোহাগসহ ২৭৬ জন। সোহাগ ২৪৭ নম্বর এজাহার নামীয় আসামি। মজার বিষয়, এজাহারেও আসামির নাম পিস্তল সোহাগই বলা হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, মামলা রুজুর দীর্ঘ সময় পরও আসামিরা মুক্ত হাওয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পিস্তল সোহাগও নিয়মিত অফিস করছেন। বলতে গেলে তিনি এখনো অধরা।
বাদী তার এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ডাকা এক দফা আন্দোলন উপলক্ষে সমাবেশ ছিল। সারা দেশের নেতা-কর্মীরা সমাবেশে যখন জড়ো হতে শুরু করেন, তখন আসামিরা তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র দিয়ে বিএনপি অফিসের আশপাশে গুলিবর্ষণ করে ত্রাস সৃষ্টি করেন। গুলিতে বিএনপির কর্মী মকবুল হোসেন নিহত হন।
মামলার অগ্রগতি জানতে তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই নাজমুলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তদন্ত শুরুর দুই-এক দিনের মধ্যেই দাপ্তরিক সিদ্ধান্তে মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ইন্সপেক্টর শাহীন শাহাবুদ্দিন এসে পুরো ডকেট নিয়ে গেছেন।
পরে ডিবি ইন্সপেক্টর শাহীন শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘মামলাটি রাজনৈতিক এবং বড়। এ ছাড়া আসামিও অনেক- ২৭৬ জন। পরে আরও পাঁচ-ছয়জন অন্তর্ভুক্ত হয়। এ কারণে তদন্ত কার্যক্রম ভেবেচিন্তে পরিচালনা করতে হচ্ছে। শিগ্গিরই আমরা শেষ করে আনতে পারব বলে আশা করছি।’
মামলাটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মামলা হওয়া সত্ত্বেও এজাহারভুক্ত আসামি কাউকেই এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি। তা ছাড়া মামলার তদন্তেও দীর্ঘসূত্রতা লক্ষণীয়, যা নানা প্রশ্নের উদ্রেক করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. সোহাগ তার পিস্তল দিয়ে অসংখ্য মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। এই পিস্তলই তার অনেক অবৈধ কর্মকাণ্ড বৈধ করে দিয়েছে। এমনকি রাজউকের একজন সাবেক চেয়ারম্যানের কক্ষেও তিনি এই পিস্তল উঁচিয়ে একজন কর্মচারীকে শাসিয়েছেন। অবশেষে এই পিস্তলই তাকে হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে। অথচ পতিত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই পিস্তলের লাইসেন্স তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন বলে চাউর আছে। রূপালী বাংলাদেশ জানতে পেরেছে, পতিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ হেলালের একান্ত সচিব ওবায়েদের ভাতিজা হাওয়ার সুবাদে এই লাইসেন্সপ্রাপ্তি তার সহজতর হয়েছে।
পকেটে পিস্তল কেন রাখেন প্রশ্ন করা হলে মো. সোহাগ বলেন, ‘এই প্রশ্ন আপনি করতে পারেন না।’ তিনি বলেন, ‘আপনি আমার ফাইল দেখে আসুন, তাহলেই বুঝে যাবেন।’ তিনি জানান, পল্টন থানার হত্যা মামলা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। 
‘রাজউকের পিস্তল সোহাগ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে রাজউকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান সরকার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন