গত দুই মাস ধরে ইসরায়েল সম্পূর্ণ অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে, ফলে গাজা উপত্যকায় খাবার, পানি ও ওষুধ পৌঁছানো বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবরোধ এক ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছে, আর এ সংকটে সবচেয়ে বেশি ভুগছে শিশুরা।
জাতিসংঘ ও স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের মতে, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশুরা এখন ক্ষুধার জ্বালায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, পরিস্থিতি যদি এমনই থাকে, তাহলে গাজায় আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে। আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে, কারণ ক্ষুধার্ত মানুষ তখন বেঁচে থাকার জন্য যেকোনো কাজ করতে পারে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে এবং ইসরায়েলের অবরোধের কারণে চিকিৎসা সরঞ্জামও পৌঁছাতে পারছে না।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক রেডক্রস, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন সংস্থা সাহায্য পাঠাতে চাইলেও সীমান্ত বন্ধ থাকায় তারা সফল হচ্ছে না।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি তিনি বাতিল করেছেন। এরপর থেকেই গাজায় কোনো ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল।
২০২৪ সালের শুরু থেকে নয় হাজারেরও বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টির চিকিৎসা পেয়েছে। তবে সহায়তা বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করেছে, প্রতিটি দিন বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শিশুদের জন্য এক নতুন আতঙ্ক নিয়ে আসছে। ক্ষুধা, রোগ ও মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
‘এই শিশুরা বোমা থেকে বেঁচে গেছে, কিন্তু এখন তারা ক্ষুধায় মরতে বসেছে,’ বলেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল।
তিনি আরও বলেন, ‘এই অবস্থার কোনো ন্যায্যতা থাকতে পারে না।’
উত্তর গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে প্রতিদিন আরও বেশি শিশু ভর্তি হচ্ছে।
চিকিৎসক ডা. আহমেদ আবু নাসির জানান, শিশুদের শরীরের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও চর্বি সহ অনেক পুষ্টিকর উপাদান এখন আর গাজায় পাওয়া যাচ্ছে না।
ভবঘুরে জীবনযাপন করা বহু পরিবার এখন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে, কিন্তু তাদের হাতে কোনো খাবার নেই।
একজন মা বলেছেন, ‘আমি চাই না আমার শিশু ক্ষুধায় মারা যাক।’ তিনি আরও বলেন, ‘খাবার ভালো না খারাপ, পুষ্টিকর কি না – আমরা তা ভাবার সুযোগ পাই না। শুধু চাই পেটে কিছু পড়ুক।’
ইসরায়েল বলছে, এই অবরোধ হামাসের উপর চাপ সৃষ্টি করতে, কিন্তু বাস্তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে শিশুরা। ২ মার্চ থেকে একটি সহায়তার ট্রাকও গাজায় ঢুকতে পারেনি। জাতিসংঘের খাবারের মজুত শেষ। রাঁধুনিঘরগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। হাসপাতালে ওষুধ নেই। শিশুদের জন্য দুধ নেই।
হামাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েল ক্ষুধাকে ‘যুদ্ধের একটি অস্ত্র হিসেবে’ ব্যবহার করছে। বহু মানবাধিকার সংস্থা ও আইন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক আইনে ইসরায়েল গাজার মানুষের খাদ্য ও সহায়তা নিশ্চিত করার দায়ভার বহন করে। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে না।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও অন্যান্য সংস্থা বলছে, লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি বর্তমানে চরম খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে। বিশেষ করে উত্তর গাজা এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।
গাজা থেকে একজন সহায়তা কর্মী আমজাদ শাওয়া বলেছেন, ‘আমাদের কাছে কোনো রসদ নেই, ওষুধ নেই, শিশুদের জন্য কোনো সহায়তা নেই। সামনে আরও মৃত্যু দেখার আশঙ্কা রয়েছে।’
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের পর এখন পর্যন্ত ৫২,৪০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বিশ্ব দেখছে, কিন্তু গাজার শিশুরা এখনও অপেক্ষায় - খাবারের, সহায়তার, আর একটু আশার জন্য।
আপনার মতামত লিখুন :