ঢাকা বুধবার, ০১ অক্টোবর, ২০২৫

চীনের উপকূলে গোয়েন্দা ড্রোন মোতায়েন করছে আমেরিকা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫, ১১:২৩ পিএম
এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন। ছবি- সংগৃহীত

মার্কিন বিমান বাহিনী কোরীয় উপদ্বীপে স্থায়ীভাবে ড্রোন মোতায়েন শুরু করেছে। চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে মাত্র ২৫০ মাইল দূরে। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দক্ষিণ কোরিয়ার পশ্চিম উপকূলে কুনসান বিমান ঘাঁটিতে ৪৩১তম এক্সপিডিশনারি রিকনাইস্যান্স স্কোয়াড্রন আনুষ্ঠানিকভাবে সক্রিয় করা হয়েছে। রাজধানী সিউলের দক্ষিণে অবস্থিত এই ঘাঁটি থেকে এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন উড়ানো হবে।

সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, এই পদক্ষেপকে কোরীয় উপদ্বীপে মার্কিন বিমান সক্ষমতা জোরদারের আরেক ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উত্তর কোরিয়ার কাছাকাছি পুনরায় এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হয়েছিল। একই সময়ে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে বেইজিংয়ে বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে দেখা গেছে।

বিমান বাহিনীর তথ্যপত্রে বলা হয়েছে, এমকিউ-৯ রিপার হচ্ছে মনুষ্যবিহীন একক-ইঞ্জিন টার্বোপ্রপ বিমান। এটি বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ মিশন এবং নজরদারি অপারেশন পরিচালনা করতে সক্ষম। রিপারের আকাশে থাকার ক্ষমতা এক হাজার ৬০০ মাইলের বেশি, অর্থাৎ প্রায় দুই হাজার ৫৭৫ কিলোমিটার। আকাশেই জ্বালানি ভরার মাধ্যমে এটি অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আকাশে ভেসে থাকতে পারে।

এই সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীকে অঞ্চলে বড় সুবিধা দেবে। কুনসান থেকে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তবর্তী বেসামরিক অঞ্চল বা ডিএমজেড মাত্র ১৫০ মাইল উত্তরে। তাই রিপারের আওতায় শুধু উত্তর কোরিয়াই নয়, পূর্ব চীন সাগর ও তাইওয়ানও রয়েছে। তাইওয়ান কুনসান থেকে প্রায় ৮০০ মাইল দূরে অবস্থিত।

অন্যদিকে, চীনের মূল ভূখণ্ড কুনসান থেকে মাত্র ২৫০ মাইল দূরে। বোহাই সাগর, যেখানে চীনা নৌবাহিনী নিয়মিত মহড়া চালায়, সেখানেও রিপারের নজরদারি পৌঁছাতে পারে। দূরত্ব মাত্র ৬০০ মাইল।

মার্কিন বিমান বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, এমকিউ-৯ অভিযানের মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গোয়েন্দা কার্যক্রম, নজরদারি এবং পুনর্গঠন শক্তিশালী হবে। মার্কিন সামরিক অঞ্চলের বিস্তৃতি যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের জলসীমা থেকে ভারতের পশ্চিম সীমান্ত এবং অ্যান্টার্কটিকা থেকে উত্তর মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত।

৪৩১তম স্কোয়াড্রনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডগলাস স্লেটার। তিনি বলেন, ‘এমকিউ-৯ মোতায়েনের ফলে এই অঞ্চলে শক্তিশালী সক্ষমতা এসেছে। আমরা এখানে মিশন সমর্থন করতে, সহযোগিতা গভীর করতে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আমাদের যৌথ প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করতে এসেছি।’

রিপার শুধু নজরদারিই নয়, সরাসরি যুদ্ধেও ব্যবহার করা যায়। এই ড্রোনগুলো হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র থেকে শুরু করে লেজার-নির্দেশিত বোমা পর্যন্ত বহন করতে পারে। তবে কুনসানে কতটি রিপার স্থায়ীভাবে থাকবে তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। বিমান বাহিনীর জানুয়ারি মাসের তথ্যপত্রে মার্কিন স্পেশাল অপারেশন কমান্ডের অধীনে মোট ৫০টি রিপারের তালিকা দেখানো হয়েছিল।

ড্রোন ইউনিটটিকে ৪৩১তম স্কোয়াড্রন হিসেবে চিহ্নিত করার মাধ্যমে বিমান বাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটি নামকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। ১৯৪৩ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এটি প্রথম ৪৩১তম ফাইটার স্কোয়াড্রন হিসেবে সক্রিয় হয়েছিল। তখন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন বোমারু বিমানের এসকর্ট হিসেবে দূরপাল্লার পি-৩৮ লাইটনিং ফাইটার উড়াত। ৪৩১তম সর্বশেষ সক্রিয় ছিল ক্যালিফোর্নিয়ায়, যেখানে এটি এফ-১১১ বিমানের পরীক্ষামূলক স্কোয়াড্রন হিসেবে কাজ করত। তবে ১৯৯২ সালে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।

দক্ষিণ কোরিয়ায় এই স্কোয়াড্রনের পুনরায় সক্রিয়করণ কোরীয় উপদ্বীপে বিমান বাহিনীর চলতি বছরের দ্বিতীয় বড় পদক্ষেপ। জুলাই মাসে মার্কিন বিমান বাহিনী ঘোষণা দিয়েছিল, কুনসান থেকে প্রায় ৮০ মাইল উত্তরে ওসান বিমান ঘাঁটিতে একটি ‘সুপার স্কোয়াড্রন’ তৈরির জন্য ৩১টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান এবং এক হাজার কর্মী স্থানান্তর শুরু করেছে। বিমান বাহিনীর হিসেবে, অক্টোবরের মধ্যে স্থানান্তর শেষ হওয়ার কথা ছিল।

মার্কিন বিমান বাহিনী বলেছে, এই অস্থায়ী স্থানান্তর আগামী বছরের অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। এ সময়ের মধ্যে তারা যাচাই করবে, ‘কোরীয় উপদ্বীপে সক্ষমতা সর্বাধিক করা এবং যুদ্ধ কার্যকারিতা বাড়ানো সম্ভব কি না।’

ওয়াশিংটনের কৌশল অনুযায়ী, প্রশান্ত মহাসাগরে উদীয়মান নতুন হুমকির মুখে মিত্রজোটকে শক্তিশালী রাখার অংশ হিসেবে এই মহড়া ও মোতায়েন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। কুনসানে রিপার ড্রোন মোতায়েন তাই শুধু উত্তর কোরিয়া নয়, বরং চীনকেও লক্ষ্য করে গড়া এক কৌশলগত বার্তা বহন করছে।