ঢাকা শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৫

এফ-৩৫ বিধ্বস্ত: সমস্যা সমাধানে ১ ঘণ্টা ফোনে কথা বলেছিলেন পাইলট

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৫, ০৬:৫২ পিএম
গত জানুয়ারিতে আলাস্কায় বিধ্বস্ত হয় এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান। ছবি- সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে চলতি বছরের শুরুর দিকে মার্কিন বিমানবাহিনীর একটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়, যার আগে পাইলট প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিনের প্রকৌশলীদের সঙ্গে কনফারেন্স কলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন। দুর্ঘটনাটি নিয়ে প্রকাশিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।

গত ২৮ জানুয়ারি আলাস্কার ফেয়ারব্যাংকসের আইলসন বিমান ঘাঁটিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিমানটি দ্রুতগতিতে নিচের দিকে নেমে যায় এবং বিস্ফোরণে আগুনের গোলায় পরিণত হয়। পাইলট নিরাপদে বের হতে সক্ষম হলেও সামান্য আঘাত পান বলে জানা গেছে। তবে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের যুদ্ধবিমানটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।

বিমানবাহিনীর তদন্তে জানা যায়, বিমানের উপরিভাগ ও প্রধান ল্যান্ডিং গিয়ারের হাইড্রোলিক লাইনে বরফ জমে গিয়েছিল, যার কারণে গিয়ারগুলো সঠিকভাবে কাজ করেনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উড্ডয়নের পর পাইলট ল্যান্ডিং গিয়ার ভাঁজ করার চেষ্টা করেন, কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভাঁজ হয়নি। পুনরায় নামানোর সময়ও সেটি সোজা না হয়ে বাঁ দিকে কাত হয়ে আটকে যায়। গিয়ার ঠিক করার প্রচেষ্টায় বিমানটি ভুলভাবে ধরে নেয় যে সেটি মাটিতে রয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত দুর্ঘটনার কারণ হয়।

সমস্যা সমাধানে পাইলট চেকলিস্ট অনুসরণ করার পর বিমানঘাঁটির কাছাকাছি উড়তে উড়তে লকহিড মার্টিনের প্রকৌশলীদের সঙ্গে কনফারেন্স কলে যুক্ত হন। এ সময় পাঁচজন প্রকৌশলী অংশ নেন—এর মধ্যে ছিলেন একজন জ্যেষ্ঠ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ফ্লাইট নিরাপত্তা ইঞ্জিনিয়ার এবং ল্যান্ডিং গিয়ার সিস্টেমের তিন বিশেষজ্ঞ।

প্রকৌশলীদের পরামর্শে পাইলট দুবার ‘টাচ অ্যান্ড গো’ পদ্ধতিতে অবতরণের করার চেষ্টা করেন। এর অর্থ—আটকে যাওয়া গিয়ার সোজা করার জন্য বিমান অল্প সময় অবতরণের পর পুনরায় উড্ডয়ন করে। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। উল্টো এতে বাম ও ডান দিকের মূল ল্যান্ডিং গিয়ারও জ্যাম হয়ে যায় এবং পুরোপুরি প্রসারিত না হওয়ায় ভালোভাবে অবতরণ সম্ভব হয়নি।

এই অবস্থায় এফ-৩৫–এর সেন্সর ভুলভাবে ধরে নেয় যে বিমানটি মাটিতে রয়েছে এবং কম্পিউটার সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘স্থল অপারেশন’ মোডে চলে যায়। ফলে আকাশে থাকা অবস্থাতেও বিমানটি ধরে নেয় যে তা ‘মাটিতে চলছে’। এরপরই বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়। তখন পাইলট বাধ্য হন বিমান থেকে বের হয়ে আসতে।

বিমানটির ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনে দেখা যায়, উপরিভাগ ও ডান দিকের ল্যান্ডিং গিয়ারের হাইড্রোলিক সিস্টেমে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তরল মূলত ‘পানি’ ছিল, যেখানে এক ফোঁটা পানিও থাকার কথা নয়।

তদন্তে আরও জানা যায়, দুর্ঘটনার নয় দিন পর একই ঘাঁটিতে আরেকটি এফ-৩৫ বিমানে একই ধরনের হাইড্রোলিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, তবে সেটি নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম হয়।

লকহিড মার্টিন এর আগেই ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে একটি রক্ষণাবেক্ষণ নিউজলেটারে এই সমস্যার বিষয়ে সতর্ক করেছিল। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল, তীব্র শীতল আবহাওয়ায় সেন্সরজনিত সমস্যার কারণে পাইলটের পক্ষে বিমান নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে। দুর্ঘটনার সময় আলাস্কায় তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১ ডিগ্রি ফারেনহাইট।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি কনফারেন্স কলে যুক্ত প্রকৌশলীরা ওই রক্ষণাবেক্ষণ নিউজলেটারটি বিবেচনা করতেন, তবে তারা দ্বিতীয়বার ‘টাচ অ্যান্ড গো’ করার বদলে সরাসরি জরুরি অবতরণ বা নিয়ন্ত্রিত ইজেকশনের পরামর্শ দিতেন। লকহিড মার্টিন এ বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে মার্কিন এয়ার ফোর্সের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।

এয়ার ফোর্সের দুর্ঘটনা তদন্ত বোর্ড সবশেষে বলেছে, বিমানের ক্রুদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ঘাটতি, বিপজ্জনক উপকরণ কর্মসূচির ত্রুটি এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ না করার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।