গাজীপুর জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক এস এম আবুল কালাম আজাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। অভিযোগ পর্যালোচনা ও তাঁর আবেদন পুণর্বিবেচনার পর তাঁকে পুণরায় স্ব-পদে বহাল করা হয়েছে।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাতে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি প্রকাশিত হলে জেলায় তা নিয়ে বেশ আলোচনা শুরু হয়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে এস এম আবুল কালাম আজাদকে সব ধরনের পদ থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তাঁর আবেদন ও অভিযোগ পর্যালোচনার ভিত্তিতে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চিঠি প্রকাশের পর রাত থেকেই শ্রীপুরে তাঁর বাসায় কৃষকদল ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ফুলের তোড়া হাতে শুভেচ্ছা জানাতে আসতে থাকেন। বাসার আঙিনা ও প্রবেশপথে লোকসমাগম বাড়তে থাকায় রাতেই সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কৃষকদলের দপ্তর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এস এম আবুল কালাম আজাদকে সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগই ছিল ওই সিদ্ধান্তের মূল কারণ।
বহিষ্কারের পর বিষয়টি নিয়ে গাজীপুর জেলা কৃষকদলে অস্থিরতা দেখা দেয়। অভিযোগ অস্বীকার করে এস এম আবুল কালাম আজাদ সে সময় কেন্দ্রীয় দপ্তরে পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন।
এরপর কয়েক দফা বৈঠক ও পর্যবেক্ষণের পর বিষয়টি পুণরায় কেন্দ্রে আলোচনায় আসে। শেষ পর্যন্ত সোমবার তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা সুদৃঢ় করা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ভবিষ্যতে তিনি আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন এমন প্রত্যাশা দলের।
পুণর্বহালের রাতেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এস এম আবুল কালাম আজাদ। বুধবার সকালে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিএনপি শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয় এটি আমার আদর্শ, আবেগ ও রাজনৈতিক পরিবার। ভুল বোঝাবুঝির অবসান হওয়ায় নতুন করে দায়িত্ববোধ ফিরে পেয়েছি। দল আমার প্রতি যে আস্থা রেখেছে, তার জন্য আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।
তিনি আরও বলেন, আগামী দিনে কৃষকদলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে মাঠে কাজ করব। সামনে যে চ্যালেঞ্জ আসবে, সেখানে আমি ও গাজীপুর জেলা কৃষকদল সবসময় দলের পাশে থাকব। শৃঙ্খলা, সংগঠন ও নেতৃত্ব সবদিক থেকেই আমরা আরও শক্তিশালী হতে চাই।
আজাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের খবরে জেলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও কৃষকদলের অধিকাংশ নেতাকর্মী এটিকে ‘স্বস্তির সিদ্ধান্ত’ হিসেবে দেখছেন। তাঁদের মতে, নেতৃত্ব সংকট কাটিয়ে সংগঠনকে নতুন করে গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
শ্রীপুর, মাওনা, কালিয়াকৈর ও কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা রাতেই তাঁর বাসায় গিয়ে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। অনেকে মনে করেন, দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর আজাদের ফিরে আসা মাঠপর্যায়ের সংগঠনে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে।
পদ ফিরে পেয়ে কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহীন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খান বাবুল এবং বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ও গাজীপুর-৩ আসনের মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক ডা. এস এম রফিকুল ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এস এম আবুল কালাম আজাদ।
তিনি বলেন, “দায়িত্ব ফিরে পাওয়া আমার কাছে শুধু একটি সিদ্ধান্ত নয়—এটি নতুন করে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ।”


