ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫

ভুয়া ভিসায় নিঃস্ব যশোরের দুই যুবক

যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৫, ০৭:৪০ পিএম
ভুক্তভোগী দুই যুবক। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রথমে লোভনীয় বেতনের চাকরির আশ্বাস দিয়ে মোটা টাকার চুক্তি হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও হাতে হাতে নেয়া হয় চুক্তির ৩৮ লাখ টাকা। এরপরে ভুক্তভোগীদের হোটেলে আটকে রেখে অতিরিক্ত আরও এক লাখ টাকা নেওয়া হয়।

এরপর ভুক্তভোগীদের হাতে দেওয়া হয় কানাডার ভিসা। পরে ভিসা অনলাইনে যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় এটি ভুয়া।

দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কালিয়ানী গ্রামের আবু সায়েম এর ছেলে আলসাবা রাতুল ও হাবিবুর রহমানের ছেলে শাকিল হোসেন।

টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর দালাল নাসির উদ্দিন আলতাফ ও তার স্ত্রী শাহানাজ বেগম গা ঢাকা দিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে ঝিকরগাছা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ভুক্তভোগী আলসাবা রাতুল জানান, দালাল নাসির উদ্দিন আলতাফ ২০২৪ সালের মার্চে তাকে নেপালে নিয়ে যান। সেখানে কানাডার এম্বাসিতে ইন্টারভিউসহ প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে এক সপ্তাহ পরে দেশে পাঠানো হয়।

দ্বিতীয়বার নেপালে যাওয়ার সময় একটি হোটেলে দুই মাস আটকে রাখা হয়। আমাদের চুক্তি ছিল ১৯ লাখ টাকা দেওয়ার। হোটেলে আটকে রেখে বাড়িতে ফোন করে চুক্তি বাদে আরও এক লাখ টাকা নেন। এর পরে কানাডার ভিসা লাগানোর জন্য পাসপোর্ট হাতে দিয়ে দালাল কুয়েতে পালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, পরে বুঝতে পারি এটি কোনো আসল কানাডার এম্বাসি ছিল না। তারা একটি এম্বাসি অফিস বানিয়ে সেখানে কাগজপত্র জমা নেয় এবং ইন্টারভিউ নেন। যাতে আমরা সন্দেহ না করি। পাসপোর্ট হাতে দেয়ার পর অনলাইনে যাচাই করলে দেখা যায় এটি ভুয়া কানাডার ভিসা।

আলসাবা রাতুলের পিতা আবু সায়েম বলেন, একটি সুন্দর জীবনের আশায় জমি বন্ধক রেখে নগদ ১৯ লাখ টাকা হাতে তুলে দেই। সুদের টাকা দিতে দিতে আজ আমরা নিঃস্ব। বছরে দুইবার আড়াই লাখ করে পাঁচ লাখ টাকা সুদ দিতে হচ্ছে।

নাসির উদ্দিন

অন্য ভুক্তভোগী শাকিল হোসেনের পিতা হাবিবুর রহমান জানান, নাসির উদ্দিন আলতাফ আমার ফুফুতো ভাই। তারা বিদেশ পাঠানোর ব্যবসা করেন। শাকিলকে পাঠানোর প্রস্তাব পেয়েছি এবং বিশ্বাস করে দোকানপাট, জমি-জায়গা, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি সব বিক্রি করে সাত বারে ১৯ লাখ টাকা দিয়েছেন। এখন আমাদের পরিবার নিঃস্ব।

এ বিষয়ে নাসির উদ্দিন আলতাফ সাংবাদিকদের বলেন, কানাডার ভিসা ভুয়া ছিল না। তারা গ্রামের মানুষ, পড়াশোনা জানে না। অনলাইনে চেক দিলে সব সময় বোঝা যায় না কোনটা সঠিক।

৩৮ লাখ টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, ভুক্তভোগীদের প্রেরণের জন্য অনুমানিক ২০ লাখ টাকা নিয়েছি।

ঝিকরগাছা থানার ওসি নূর মোহাম্মদ গাজী জানান, কানাডায় পাঠানোর নামে ভুয়া ভিসার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।