মাত্র ২২ বছর বয়স। এই সময়টা যেখানে স্বপ্ন দেখার, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা, সেখানে কনি মিয়া কাটাচ্ছেন হাসপাতালের বিছানায়। দুরারোগ্য কিডনি বিকল রোগে আক্রান্ত এই তরুণের দুটো কিডনিই পুরোপুরি বিকল হয়ে গেছে। সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস করে কোনোমতে বেঁচে আছেন। চিকিৎসকেরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- অবিলম্বে কিডনি প্রতিস্থাপন না করলে কনির জীবন বাঁচানো সম্ভব নয়।
চরম দরিদ্র পরিবারের সন্তান কনি মিয়া। মা মনোয়ারা বেগম ছেলের জীবন বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দিতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচের অপারেশন করানোর সামর্থ্য নেই তাদের। এই মানবিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে পরিবারটি সমাজের সহৃদয় মানুষদের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে।
শেরপুর শহরের চকপাঠক মহল্লার দিনমজুর আশ্রাব আলী ও মনোয়ারা বেগমের চার ছেলের মধ্যে কনি সবার ছোট। সংসারের চাকা ঘোরাতে পড়ালেখা ছাড়তে হয় দশম শ্রেণির পর। চালকলের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে পরিবারের হাল ধরেছিলেন কনি।
সবকিছু পাল্টে যায় যখন হঠাৎ চোখে কম দেখতে শুরু করেন কনি। চোখের চিকিৎসা করাতে গিয়ে জানা যায় তার দুটি কিডনিই বিকল। এরপর ময়মনসিংহ ও ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায়- ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে কিডনি প্রতিস্থাপন।
চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে পরিবারের সহায়-সম্পদ বলতে যা কিছু ছিল, সবই শেষ। এখন ঢাকার সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। প্রতিটি সপ্তাহেই ডায়ালাইসিসের পেছনে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার টাকা, যা দান-সাহায্য ছাড়া মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
কনি মিয়ার মা মনোয়ারা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমি নিজের কিডনি দিতে রাজি। কিন্তু চিকিৎসার এত টাকা কোথা থেকে আসবে? আমার ছেলেটা নামাজি, পরিশ্রমী, কখনো কারো ক্ষতি করেনি। আল্লাহর দোহাই লাগে, কেউ যদি একটু সাহায্য করেন…’
কনির মামা মানিক মিয়া একজন অটোরিকশাচালক। তিনি জানান, চিকিৎসার জন্য যা কিছু ছিল, সবই খরচ হয়ে গেছে। আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয়রা মিলে যতটুকু সাহায্য করেছেন, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।
এ বিষয়ে শেরপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘সমাজসেবা অধিদপ্তর নির্দিষ্ট রোগে আক্রান্ত দরিদ্রদের সহায়তা দিয়ে থাকে। কনি মিয়া নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করলে যাচাই-বাছাই শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে আর্থিক সহায়তা দেওয়া সম্ভব।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন